রোজা রাখা অবস্থায় মাথাব্যাথা কেন হয়? এজন্য কি করা উচিত?

………………….

রোজা শুরুর প্রথম কয়েকদিন অনেকেই মাথা ব্যাথায় ভোগেন। রোজাকালীন সময়ে মাথা ব্যাথা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যার উপসর্গ। রোজায় লম্বা সময় ধরে, কোন ধরনের খাবার ও পানি গ্রহণ না করার ফলে, শরীর স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়।

যাদের আগে থেকেই মাথা ব্যাথার রোগ কিংবা মাইগ্রেনের সমস্যা আছে , তাদের রোজায় মাথা বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করবেন।

আর যাদের আগে থেকে মাথাব্যথার রোগ নেই, তাদের রোজার সময় মাথাব্যথার প্রধান কারণ হলো, পানি স্বল্পতা, শরীরে শর্করা বা গ্লুকোজের অভাব ও ঘুমের অসুবিধা।

দীর্ঘ সময় রোজা থাকার কারণে, শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। ব্রেইনে পানি সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে মাথায় ব্যাথা হয়।

আবার দীর্ঘও সময় না খেয়ে থাকার কারণে, শরীরের শর্করা বা গ্লুকোজের ঘাটতি হয়। এ জন্য ব্রেইনে শর্করা বা গ্লুকোজ কমে যায়। যেহেতু শর্করা বা গ্লুকোজ ছাড়া ব্রেইন চলতে পারে না, তাই এর অভাবে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করা হঠাৎ নেমে গেলেই মাথা ব্যথা শুরু হতে থাকে।

আবার রোজায় যেহেতু রাতে জেগে সেহরি খাওয়া হয়, তাই তখন ঘুমেরও সমস্যা দেখা দেয়, আর একারণে মাথাব্যথা হতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক রমজানে মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি উপায়,

১। ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত দুই/ আড়াই লিটার পানি পান করুন। সম্ভব হলে, ইফতারের পর প্রতি ঘণ্টায়, ১ গ্লাস করে পানি পান করতে থাকুন।

২। নির্ধারিত সময়ের আগে কখনো সেহেরি করবেন না। সেহেরিতে পরিপূর্ণ খাবার খান। সেহরিতে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাবেন না। আপনি যদি সাহরিতে বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন, তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হুট করে বেড়ে আবার কিছুক্ষণ পর তা নেমে যাবে, আর তখনই মাথা ব্যথা শুরু হবে। সেহরি শুরুর ১০/১৫ মিনিট আগে, একসাথে ২ গ্লাস পানি পান করতে পারেন। একবারে ২ গ্লাস না পারলে, অল্প অল্প করে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

৩। শরীর সুস্থ রাখার জন্য, ইফতার ও সেহেরিতে পরিমাণ মতো, শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যা রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা বজায় রাখবে। ( যেমন, ভাত, মুড়ি, চিড়া, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি)

৪। সারাদিন যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন। ঠাণ্ডা জায়গায় কিংবা এসি বা ফ্যানের নীচে থাকার চেষ্টা করুন। চাইলে দিনে ২/৩ বার, নরমাল পানিতে গোসল করতে পারেন।

৫। দিনের বেলা কঠোর পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে করে শরীর ডিহাইড্রেট বা পানি স্বল্পতা হয়ে মাথা ব্যাথা করতে পারে। চাইলে, ইফতারের দেড়/দুই ঘণ্টা পর, ২৫/৩০ মিনিট হাটাহাটি বা ব্যায়াম করতে পারেন।

৬। মাথা ব্যাথা এড়াতে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের (মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি) ব্যবহার কমিয়ে দিন।

৭। রোজায় ঘুমের অভ্যাস সঠিক রাখুন। অনেক বেলা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে, ঘরের স্বাভাবিক কাজগুলো করুন। বেশি খারাপ লাগলে, দিনের একটা সময় অল্প পরিমাণে, ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন।

আর যদি আপনার মাথা ব্যাথা অসহ্য রকমের হয় এবং রোজা করতে সমস্যা হয়, তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…….. তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment