…………
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার কারণে অনেকেই চাপ দিয়ে মলত্যাগ করেন। এই কারণে মলত্যাগের সময় মলদ্বারের রক্তনালি ফুলে গিয়ে ছিঁড়ে যায়। এতে অনেক রক্তপাত হতে পারে। শক্ত মলের কারণে মলদ্বারও ছিঁড়ে যেতে পারে। ফলে অল্প রক্তপাত ও তীব্র ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার জন্য রোগী কোনো কাজ ঠিকমত আর করতে পারেন না। মলত্যাগের সময় রক্তপাত হলে রোজাও ভেঙে যায়। তীব্র ব্যথার কারণে আবার অনেক সময় রোগীকে রোজা ভেঙে ফেলতে হয়। এরপর রোজা আর রাখতে পারবেন কিনা এই ধরণের নানা চিন্তা মাথায় আসে। ফলে অনেকেই রমজানে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যান। চলুন এর জন্য কি করলে আরাম মিলবে, তা জেনে নেই…
রোজায় কেন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়? আর কি করলে আরাম মিলবে?
১। আমাদের পেটের ভেতরে থাকা খাদ্যনালীতে পায়খানা তৈরি ও জমা থাকে। সেখানে খাবারের আঁশ বা ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখার কাজটি করে। ফলে আমাদের পায়খানা নরম ও পিচ্ছিল হয়। ফলে পায়খানা খাদ্যনালী দিয়ে দিয়ে সহজেই এগোয় এবং শরীর থেকে বের হয়। খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
রোজায় খাদ্যতালিকায় অধিক ভাজাপোড়াযুক্ত ও শাকসবজিহীন বা ফাইবারবিহীন খাবারের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, আর তখনই দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
কোষ্ঠকাঠিন্য রুখতে ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার প্রচুর খেতে হবে। ডাল, ছোলা, গাজর, শসা, টমেটো, আপেল, কলা, পুদিনা, লেটুস, লাল চাল, লাল আটার মতো গোটাদানাসহ অনেক শাক-সবজি ও ফলমূলে যথেষ্ট মাত্রায় আঁশ থাকে। ভালো হয় এসব খাবার নিয়মিত খেতে পারলে।
২। মল বা পায়খানা নরম করতে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। পায়খানা যাতে খাদ্যনালীতে খুব সহজেই চলাচল করতে পারে, কোথাও আটকে না থাকে, সে জন্যও প্রয়োজন পানি। তাই যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান না করলে পায়খানা শক্ত হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের আশঙ্কা বাড়তে পারে।
তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সম্ভব হলে, ইফতারের পর, প্রতি ঘন্টায় ১ গ্লাস করে পানি পান করুন।
৩। ইফতারে অধিক চিনিযুক্ত পানীয় বা শরবত না খাওয়াই ভালো। যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি, যেমন তরমুজ, শসা, বাঙ্গি, কচি ডাবের পানি, কমলা, আঙ্গুর এবং আনারস এর জুস, ফ্যাট ছাড়া দুধ পান করুন, যা মলকে নরম রাখবে।
৪। যেসব খাবার শরীরে পানি কমিয়ে ফেলে, সেসব খাবার বা পানীয়, যেমন চা, কফি, অধিক মসলাযুক্ত ও তেল চর্বিযুক্ত খাবার, ভাঁজা পোড়া যথাসম্ভব কমিয়ে দিতে হবে।
৫। রোজার সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে লো ফ্যাট টক দই গ্রহণ করুন। দই এ প্রোবায়োটিক থাকে, যা হজমের জন্য বেশ উপকারী।
৬। পায়খানার বেগ হলে অনেকে তা আটকে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে দিন দিন শরীর, সেটা থেকে পানি শুষে নেয়। এতে পায়খানা ক্রমেই শক্ত হতে থাকে। তখন তা শরীর থেকে বের করা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়, আর তখনই দেখা দেয় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য।
৭। হাঁটা-চলা না করা, অনেকক্ষণ শুয়ে-বসে থাকা, ব্যায়াম না করা ইত্যাদি অভ্যাসের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। হাঁটাচলা করলে খাদ্যনালী সচল হয় এবং স্বাভাবিক পায়খানা হতে সাহায্য করে। চেষ্টা করুন প্রতিদিন, ইফতারের দেড় /দুই ঘণ্টা পর, ২৫/৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করার। সারাদিন ধরে ঘরের সব কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন।
৮। অনেক বেশি মানসিক চাপ, উদ্ধিগ্নতা বা বিষণ্নতায় ভুগলে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৯। রাতের ঘুম নিশ্চিত করুন। রাতের ঘুম সুস্থ হজমের জন্য খুবই জরুরি। চেষ্টা করুন, তারাবীহর নামাজের পর পরই শুয়ে পড়তে।
১০। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হলে লেক্সিটিভ জাতীয় ওষুধ (যেমন : ল্যাকটুলোজ) পরিমাণ মতো খেতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা করা উচিত নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তী সময়ে পাইলসসহ মলদ্বারের নানা রকম সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি যদি কারও মলত্যাগের আগে ও পরে অথবা মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় এবং মলত্যাগে ব্যথা অনুভব হয় অথবা ওজন কমতে থাকে, তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…… তিনা শুভ্র ।।
