নারী-পুরুষ উভয়ই পিত্তথলি বা গলব্লাডারের পাথরের সমস্যায় ভোগেন। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের, পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অনিয়মিত/ অপরিকল্পিত/ যাচ্ছেতাই, জীবনযাপনের কারণে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম কিংবা বাইরের দোকানের খাবার রেগুলার খাওয়া, গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার অভ্যাস, কম পানি পান করা, কম শাকসবজি খাওয়া, নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম না করা, মেনোপজের পর হরমোনের সমস্যা, ইত্যাদি কারণে পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
আমাদের পেটের ডানদিকে, লিভারের পেছনে ও তলার দিকে থাকে পিত্তথলি। পিত্তরস তৈরি করাই এর কাজ। খাবার হজমে, বিশেষ করে, আপনি যখন চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন, তখন সেটা হজমে সাহায্য করার জন্য, পিত্তরস ব্যাবহার হয়। আর তাই পিত্তাথলিতে পাথর হলে. মাংস, তেল ও মসলাজাতীয় খাবার খেলে পেটে ব্যথা হয়, সঙ্গে বমিও হতে পারে। আর পেটের ডান দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়ে, ডান কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছায়। এরকম হলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডাক্তারি পাঠ্য অনুযায়ী “ফাইভ এফ ( 6F ) ফ্যাক্টর” বলে একটি বিষয় আছে- যাদের পিত্তথলির পাথর বেশি হয়। যদিও বর্তমানে দেখা গেছে, যে কারো এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর এই ৬ টি ফ্যাক্টরগুলো হলঃ …
১) ফিমেইল (নারীদের বেশি হয়)
২) ফ্যাটি (মোটা মানুষের বা যারা অতিরিক্ত ফ্যাটি খাবার খান, তাদের বেশি হয়)
৩) ফরটি (৪০ বছরের পর বেশি হয়)
৪) ফারটাইল (প্রজননক্ষম নারীদের বেশি হয়, যাদের দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাবার অভ্যাস আছে )
৫) ফ্যামিলি হিস্ট্রি (যদি পরিবারে কারো এই রোগ থাকে, তাহলে সম্ভাবনা বেড়ে যায়)
৬) ফেয়ার (ফর্সা, মসৃণ ও উজ্জ্বল নারীদের বেশি দেখা দেয় )
মেনে চলুন কিছু নিয়মঃ
পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধে কিছু নিয়ম মেনে চলতে চলতে পারেন, যেমন-
১. অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে, ৫০/৬০ মিনিট, জোরে জোরে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। শরীরে চর্বির পরিমান বেশি হলেও, হাঁটা আপনাকে সুফল এনে দেবে। নিয়মিত হাঁটা এমনই একটি পন্থা, যা শুধু মোটা মানুষকেই নয়, যেকোনো স্বাস্থ্যের কাউকে করে দিতে পারে, সব দিক থেকেই সুস্থ এবং প্রানবন্ত।
২ অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব কমিয়ে দিন বা বাদ দিন। প্রানিজ চর্বি বাদ দিন আর উদ্ভিজ্জ চর্বি বা তেল খান, তবে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারবেন।
৩। লো ফ্যাট বা স্কিমড দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খান। দুধ খাওয়া একেবারে বাদ দিবেন না। এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি সহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৪। পর্যাপ্ত পরিমাণ মত পানি পান করুন। প্রতিদিন আড়াই / তিন লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৫. ওজন কখনই রাতারাতি কমাবেন না। ওজন কমাতে ক্রাশ ডায়েট না করে, নিয়ম মেনে ডায়েট করুন। রাতারাতি ওজন কামালে বা ক্রাশ ডায়েট করলে, পিত্তথলিতে পাথরের কারন বহুগুন বেড়ে যায়।
টানা অনেকটা সময় খালি পেটে থাকলে, গল ব্লাডারে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ৩/৪ ঘণ্টা পর পর, হাল্কা কিছু খেতে পারেন। এতে আপনার মেটাবোলিজম ঠিক থাকবে আর ওজনও নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
৬। কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ যদি ঘন ঘন খেয়ে থাকেন, তা হলেও পিত্তথলিতে পাথর জমার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাবেন না।
৭. অতিরিক্ত মিষ্টি, তেল, ঝাল, মশলাযুক্ত খাবার, যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। চেষ্টা করুন, বাইরের/ দোকানের খাবার না কিনে, ঘরে নিজে বানিয়ে খেতে। কেননা, বাইরের/ দোকানের রান্না করা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট এবং অস্বাস্থ্যকর তেলের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…………..
……তিনা শুভ্র ।।
…
