নমরুদ ও নীল মশা

দিনটা ছিল উত্তপ্ত। আকাশে একবিন্দু মেঘ নেই। মসজিদের ভেতর গাদাগাদি করে বসা বিভিন্ন বয়সের ঘর্মাক্ত মুসল্লিরা বলাবলি করতে লাগলো, দেশটা বুঝি আরব দেশের মতো মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।

শান্তিপুর জামে মসজিদে জুমার বয়ান দিচ্ছিলো নবাগত এমাম নঈম ইসলাম। অনভিজ্ঞতার কারণে তার বক্তব্য দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিলো, আর জমায়েত উশখুশ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু তরুণ বক্তার যেন তার মোবাইলে নকশা করে আনা লেকচার শেষ করতেই হবে। 

“নমরুদের দিন ঘনায়ে আসছিলো। আল্লাহ তাকে যতই ছাড় দেন, সে ততই বেয়ারা-বেয়াদব হয়ে উঠে। একদিন সে নবী ইব্রাহিমকে ডেকে বললো, সে দুনিয়ার খোদা হয়ে গেছে, এখন সে আসমানের খোদার সাথে যুদ্ধ করে আসমান জয় করতে চায়। বন্ধুরা, নমরুদকে হারানোর জন্য খোদার বিরাট সৈন্য বাহিনী পাঠানোর দরকার ছিল না, তাই তিনি পাঠালেন তার সবচেয়ে দুর্বল সৈন্যদলকে। যুদ্ধের দিন নমরুদের বাহিনীকে ঘেরাও দিলো কোটি কোটি মশা, তারা নমরুদের বাহিনীকে কামড়ে শেষ করলো। বাকি রইলো বাদশাহ নমরুদ।“

মসজিদ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে জালাল চৌধুরীর দায়িত্ব ছিল ইমামের কথা-বার্তা মন দিয়ে শোনা। সুতরাং তিনি বুঝতে চেষ্টা করছিলেন, কথা-বার্তা কোন দিকে গড়াচ্ছে। এখনকার মৌলানাদের একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, মিম্বরে দাঁড়াতে পারলে তারা ইচ্ছে করে ফেরাউন-নমরুদের কেচ্ছা বলবে। মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারের সমালোচনা। এইসব চালাকি জালাল সাহেবের জানা আছে। তিনি আবার কান খাড়া করলেন বয়ান ভালো করে অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে।

“ভাইসব, সেই মশা বাহিনীর মধ্যে ছিল ল্যাংড়া এক মশা, যে কিনা ছিল বিকলাঙ্গ, যুদ্ধে যেতে অপারগ। সে অনুমতি চেয়ে রওনা হলো নমরুদকে মারতে, আল্লাহর আদেশে সেই মশা ঢুকে গেলো নমরুদের নাকে। তারপর সে আশ্রয় নিলো নমরুদের ব্রেনে। সেখানে তার ব্রেনের সব রক্ত শুষে খেতে শুরু করলো ল্যাংড়া ওই মশা।“

মসজিদের যে সাব-কমিটি ছোকরাকে নিয়োগ দিয়েছে, জালাল নিজেও সেই কমিটিতে ছিলেন। ছেলেটাকে তার বেশ চটপটে মনে হয়েছিল। কিন্তু একটা বিষয়ে আজ খটকা লেগে গেছে জালালের মনে – নমরুদের গল্প বলতে গিয়ে সে কেন যেন বারবার তার দিকেই তাকাচ্ছে। মতলবটা কি? আসলে মাদ্রাসার পোলাপানকে কোন বিশ্বাস নেই – মুখে যতই স্যার-স্যার করুক, ভেতরে ভেতরে এরা যে রাজাকার চিন্তাধারার ধারক-বাহক সে বিষয়ে জালালের কোন সন্দেহই নেই।

“ভাইসব, ওই মশার কামড়ে নমরুদ পাগল হয়ে গেলো। ও এক সৈন্য রাখলো তার মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়ার জন্য, যতবার বাড়ি দেয় ততবার নমরুদ একটু আরাম পায়। এক ফজরের ওয়াক্তে সেই সৈন্য বিরক্ত হয়ে জোরে বাড়ি মারলো নমরুদের মাথায়, আর নমরুদের মাথা দুই ভাগ হয়ে গেল। নমরুদ মারা গেলো তার নিজের সৈন্যের হাতে, আর সেই ল্যাংড়া মশা ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে গেলো তার আগের ঠিকানায়। ভাইসব, আল্লাহর বিচার এমনই হয়।” 

নমরুদের কাহিনী বলতে গিয়ে কেন সে বার বার জালালের দিকেই তাকাচ্ছে, সেটা এখনো স্পষ্ট না। যদিও চিন্তার তেমন কিছু নেই, একটু খোঁজ-খবর নিলেই পুরো বিষয়টা ধরা যাবে – বয়স তো আর কম হলো না, এরকম কত আলেম-বিদ্বান দেখেছেন জালাল তার কি কোন ইয়ত্তা আছে ! অসম্ভব না,  মোস্তফা সরওয়ারের গ্রূপ এমামকে তার বিরুদ্ধে খেলাচ্ছে – জহির ধারণা করলেন।

“আপনে কি ভাবছেন, নমরুদের কাহিনী খালি ইতিহাসের এক কেছ্ছা? আমাদের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই? ভুল, ভাইসব, ভুল। এইটা খালি একটা গাল-গল্প হইলে খোদা এই কাহিনী কোরানে ঢুকাইতেন না। খোদা এই কাহিনী কোরানে দিসেন, কারণ তিনি জানেন আপনের ভিতরেই আছে সেই নমরুদ, আপনেরেই সেই নমরুদরে সাইজ করতে হবে।”

মসজিদ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে জালাল চৌধুরী সাহেবের কিছু একটা করতেই হতো। এমাম যেন আবার বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য দ্রুততার সাথে চার রাকাআত বা’দাল জুমা নামাজ পড়ে পর তিনি মিম্বরের পাশে গিয়ে বসলেন। এমাম নঈম তাকে সালাম জানালো, কিন্তু জালাল তার উত্তর দিলেন না – সবসময় সালামের উত্তর দিলে ব্যক্তিত্বের ধার থাকে না।

“নঈম, গরমের সময় বয়ান শর্ট করা দরকার। মুসল্লিদের কষ্ট খোদা তায়ালার সহ্য হয় না।” নঈম

মাথা নিচু করে বসে রইলো। তার চার আঙ্গুল দীর্ঘ সুন্নতি দাড়ি তার কালো কুর্তার সাথে মিশে যেতে চাইছিলো।

“আর এই যে ফেরাউন-নমরুদের কেচ্ছা-কাহিনী মারাইতে থাকো, এগুলি তো সবাই জানে। তোমরা তো বলবা ঈমান-আমলের কথা। গরিব লোকজন নামাজ-রোজা করবে, বড়লোকরা হজ-জাকাত করবে, এইগুলি। কথায় কথায় ফেরাউন-নমরুদ হান্দাও ক্যান? তুমি মনে করসো, আমরা কিসু বুঝি না? আমরা দুধ-পিতা বাচ্চা?”

“স্যার,” – নিচু গলায় উচ্চারণ করলো ক্ষীণকায় ইমাম, বিশালবপু জালালের পাশে যাকে রীতিমতো অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হচ্ছিলো – “আমার শেখ আমারে শিখায়েছে, ফেরাউন-নমরুদ কোন ইতিহাসের কাহিনী না। যে লোক কোরান তেলাওয়াত করতেসে, তার ভিতরেই আছে নমরুদ, তার ভিতরেই আছে ফেরাউন, কোরান বলসে নিজের ভিতরের ফেরাউন আর নমরুদকে কুরবানী করতে।”

জালাল সাহেবের চোখ লাল হয়ে উঠলো – “এইটা কি বল্লা, নঈম? আমার মধ্যে নমরুদ আছে? নমরুদ জ্যান্ত মানুষকে আগুনে ফেলে মারতো। আমরা কি এদের মতো? তোমার মাথা কি ঠিক আছে?”

নায়িমের মুখটা হলো দেখার মতো। সে পারলে জালাল সাহেবের পা ধরে – “স্যার, স্যার, স্যার। আপ্নে ভুল বুঝতেসেন। স্যার, ভুল হইলে মাফ কইরা দেন, স্যার।”

আমরা অনেকসময় ভাবি, আমি নরম হলে প্রতিপক্ষও নরম হবে। কিন্তু কখনো কখনো এই কৌশলটা বরং উল্টো ফল নিয়ে আসে। কারণ কাউকে নরম দেখলে মানুষের রাগ আরো পেয়ে বসতে পারে। জালাল সাহেবের ক্ষেত্রেও তাই হলো সম্ভবত, স্থূল মানুষটা তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর “মেম্বর, মেম্বর” বলে চিৎকার করতে লাগলেন।

মেম্বর রোকনুজ্জামান হন্ত-দন্ত হয়ে ছুটে এসে হা করে তাকিয়ে রইলো। জালাল যখন বললেন – “এই বাচ্চা পোলা কয় কি, শুনছো? ও কয় আমি নাকি নমরুদ। নমরুদ না হইলেও ফেরাউন। তোমরা কয় কও?”

রোকনুজ্জামান চোখ গরম করে ইমাম নাঈমের দিকে তাকালেন – “পিচ্চি পোলা, তোমার তো সাহস কম না? আমার আগেই সন্দেহ হইছিলো, এই হারামজাদা বিরোধী দলের চর। খাড়া, তোর ব্যবস্থা নিতেছি।”

নাঈম কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু রোকনুজ্জামান দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলো। সে বেরিয়ে যাওয়ার পর জালাল বললেন – “খাড়াও, তোমার আজকে বিচার হইবো।”

“স্যার, আমি আপনেরে কিছু বলি নাই। আপনে আমারে মাফ কইরা দেন।” – নাঈম জালালের পা জড়িয়ে ধরলো, যে কারণে তাকে আরো বেশি করে অপরাধী বলে মনে হতে লাগলো।

মেম্বর রোকনুজ্জামান কয়েকজন পোলাপান নিয়ে এলো, এরা আজমপুর সরকারি কলেজে পড়ে, জালাল ইউনুস সাহেবকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সহ-সভাপতি বানায়। যেহেতু সূর্যের চেয়ে বালি বেশি গরম হয়ে থাকে, সুতরাং তারা এসে উপস্থিত হতেই মসজিদে বিরাট একটা হট্টগোল শুরু হয়ে গেল।

শেষ পর্যন্ত রফা হলো যে, এমাম নঈমকে মসজিদের গেটের ঠিক বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে সে দশবার কানে ধরে উঠ-বস করবে আর স্বীকার যাবে, যে সে আর কোনোদিন মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ শ্লোগান দিয়ে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করবে না।

প্রথম যখন আগুন লাগে, তখন তাকে নিরীহ মনে হয়, আর সেটা যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন করার আর কিছুই থাকে না। ফলে খুব দ্রুতই ঘটনা আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গেলো। নঈমকে রাস্তায় নামানোর সাথে সাথে সরকার দলের সমর্থক লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠলো, ফলে তারা দাবি করতে শুরু করলো – খালি কানে ধরে উঠ-বস করলেই হবে না, সেটা করতে হবে কাপড়-চোপড় খুলে। নঈম রাজি হচ্ছিলো না বলে তার ওপর স্যান্ডেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তিনজন। তার সবুজ পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেললো একজন, আর টেনে-হিচড়ে তার পাজামা খুলে ফেললো আরেকজন। সাদা আন্ডারওয়ার পরা মসজিদের ইমামের শাস্তি দেখতে ততক্ষনে জোর হয়ে গেছে শুভেচ্ছা কোচিং-এর ছাত্ররা। 

বিকেল নাগাদ নাঈম এলাকা ছেড়ে পালালো, লজ্জায় নাকি ভয়ে সেটা বোঝা গেলো না। শান্তিপুর মসজিদের আসরের নামাজ তাই পড়াতে হলো মুয়াজ্জিন একরামুল হক সাহেবকে। একরামুল বহুদিন এলাকায় আছেন, কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভালো করে জানেন।

সেই শুক্রবার সন্ধ্যায়, আরবি পঞ্জিকা অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর নতুন করে শুরু হয়ে যাওয়া দিনে, শান্তিপুর বাজারে খোদার গজবের মতো কোথা থেকে নেমে এলো লাখো লাখো মশা। সারা এলাকা ছেয়ে গেলো অদ্ভুত নীল রঙের সেইসব মশায়।

এলাকাবাসী বলাবলি করতে লাগলো, সম্ভবত সিটি কর্পোরেশনের দুর্বল ওষুধের রসায়নে তৈরী হয়েছে এই হাইব্রিড মশা। তারা যে যার মতো ঘরে আশ্রয় নিয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে দিলো, কেউ কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েল জ্বালিয়ে বন্ধ ঘরের ভেতর ভীষণভাবে কাশতে লাগলো। 

ঘরে ঢোকার সাথে সাথে জালাল সাহেবকেও একদল নীল মশা ঘিরে ফেললো। মাগরেবের পর কাজের ছেলেটা সম্ভবত সন্ধ্যায় শোয়ার ঘরের জানলা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল। একবার সামনে আসুক, পিটিয়ে ওর পিঠের ছাল তুলতে হবে। ছোটোলোকগুলির কোনোদিন কোন শিক্ষা হবে না।

মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটটা চালু করে জালাল মশা তাড়াতে শুরু করলেন। প্রতিবার কট করে শব্দ হতেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তির মতো পুলক অনুভব করতে লাগলেন জালাল। খুব দ্রুতই মশার দল রণে ভঙ্গ দিয়ে ঘরের কোনায় পালাতে শুরু করলো, শুধু একটা একগুঁয়ে মশা তার কানের কাছে গুন্ গুন্ শব্দ করে চললো।

ক্লান্ত জালাল কাঠের চেয়ারে গিয়ে বসতেই দেখলেন, তার ডান হাঁটুতে নীল একটা মশা বসে আছে। এটাই সম্ভবত সেই নাছোড়বান্দা মশা, যেটা তার কানের কাছে শেষ পর্যন্ত ঘ্যান ঘ্যান করছিলো।

তিনি সজোরে একটা থাপড় বসিয়ে দিলেন নিজের হাঁটুতে, কিন্তু মশাটা উড়ে গিয়ে বসলো তার বাঁ হাঁটুতে। জালাল লক্ষ্য করলেন, মশাটার একটা পা ভাঙা। তিনি আবার চাপড় বসালেন নীল মশাটা মারার জন্য। আর তখনি তার কাশ শুরু হলো, এমন কাশ যেমনটা তার জীবনে আর কখনো হয় নি।    

সেই অদ্ভুত কাশ ধরে আসতে না আসতেই জালাল সাহেবের মনে হলো, নিঃশ্বাসের সাথে কিছু একটা তার স্থুল নাকের ডান গহ্বরে ঢুকে গিয়েছে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন এটা সেই মশাটা, কেননা দুর্ঘটনার সাথে সাথে মশার সেই গানও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তিনি বেশ কয়েকবার নাক ঝাড়লেন, কিন্তু নাকের পানি ছাড়া কিছুই বেরিয়ে এলো না।

কিন্তু মশাটা গেলো কোথায়? জালাল সাহেব শুনেছেন, নাকের সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলোর সরাসরি একটা যোগাযোগ আছে। এটা কতটুক সত্যি, বলা মুশকিল – কিন্তু এটা বেশ আতঙ্কের কথা যে এতো চেষ্টার পরও মশার কোন গলিত মৃতদেহ তার নাক থেকে বেরিয়ে আসে নি।

জালাল ফোনে ডাক্তার সাবেরকে ধরার চেষ্টা করলেন। সাবের তার স্কুলের বন্ধু, দিন কিংবা রাতের যে কোন সময় শারীরিক যে কোন সমস্যা নিয়ে তাকে ফোন করা যায়। কিন্তু সাবের ফোন ধরলো না, জালাল সাহেবের কপালে ভাজের সংখ্যা বাড়লো।

জালাল সাহেব বেসিনের সামনে গিয়ে আরেকবার নাক ঝাড়লেন, শেষ চেষ্টা। কিন্তু কাঙ্খিত ছোট্ট নীল ময়লাটা সর্দিজলে খুঁজে পাওয়া গেলো না। মশা নাকে ঢুকে গিয়ে বেঁচে যেতে পারে কিনা, ডাক্তার সাবেরের কাছ থেকে সেটা জানার জন্য জালাল ফোনটা খুঁজতে লাগলেন। পাঞ্জাবির ডান পকেট থেকে ওটা বের করে সাবেরকে ডায়াল করতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে শব্দটা তার কানে এলো – মিহি করুণ একটা শব্দ, সূক্ষ্ম সুরে একটানা গানের মতো করুণ একটা শব্দ।

জালাল সাহেবের বুঝতে কষ্ট হলো না, এটা মশার সেই প্রাকৃতিক সংগীত যা একটু আগেও তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন, তারপর সেটা বন্ধও হয়ে গিয়েছিলো।

কিন্তু বন্ধ হয়ে গিয়ে সেটা আবার কেন বেজে উঠছে? কোথা থেকেই বা বেজে উঠছে? জালাল সাহেবের মনে হলো, সুরেলা সেই শব্দটা নাক আর মস্তিষ্কের মাঝামাঝি তার কপালের অন্দরমহল থেকেই আসছে। শুধু কি তাই ! জালাল সাহেব আতঙ্কের সাথে আবিষ্কার করলেন, প্রতি মুহূর্তে সেই শব্দটা একটু একটু করে বাড়ছে, বাড়ছে তো বাড়ছেই।

একসময় জালাল সাহেবের মনে হলো, তার মাথার ভেতর একটা চুলকানি হচ্ছে। মশা কামড়ালে যেরকম চুলকানি হয়, অনেকটা সেরকম এলার্জিক একটা রিএকশন। তিনি আতংকিত হয়ে উঠলেন, কারণ মাথার ভেতর কিভাবে চুলকাতে হয় তা তার জানা নেই।

জালাল নিজের অজান্তেই আর্তনাদ করে উঠলেন – “নমরুদের কাহিনী আমার জন্যে না। এই কাহিনী আমার জন্য না। কোনোদিনই আমার জন্য না।” জালাল মশা মারার ব্যাটের হাতল দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন, সাময়িক স্বস্তির আশায়। যতবার মাথায় বাড়ি দেন, ততবার মুহূর্তের জন্য চুলকানোটা কমে, কিন্তু পর মুহূর্তেই সেটা আবার ফেরত আসে। মাথায় ব্যাট দিয়ে আঘাতের শক্তি বাড়াতে লাগলেন জালাল সাহেব, নিজের অজান্তেই।

Leave a comment