………………..
আমাদের কেন ভালো লাগে? আমরা কেন খুশি হই?
আমাদের মেজাজ, অনুভূতি, ভালো লাগা নিয়ন্ত্রণ করে চারটি হরমোন। এগুলোকে বলে হ্যাপি হরমোন। এগুলো হলো ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন। এই হরমোনগুলোর কারণেই আমরা খুশি হই, আনন্দে থাকি, আমাদের মনমেজাজ ভালো থাকে। শরীরে এদের মাত্রা বেড়ে গেলে, আমরা হাসি-খুশি এবং প্রাণবন্ত থাকি। আর কমে গেলে এর উল্টোটা ঘটে অর্থাৎ মন খারাপ হয়। খাবার-দাবারের পাশাপাশি কিছু অভ্যাস, আমাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।
কি করলে এই হরমোনগুলোর নিঃসরণ বাড়ানো যাবে, সেটা নিয়ে আজ আলোচনা করব।
১. প্রাণ খুলে হাসুন। হাসি কে বলা হয়ে থাকে দুনিয়ার একামত্র ওষুধ, যেটা ফ্রিতে পাওয়া যায়, কিন্তু যার কর্মক্ষমতা যেকোনো দামী ওষুধের চাইতেও অনেক বেশি। প্রতিদিন ১০ মিনিট করে হাসলে নাকি আয়ু ২ মিনিট বাড়ে। হাসির কারনে শরীরে হ্যাপি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার কারনে ভালোলাগা বোধ চলে আসে, যা প্রদাহ ও ব্যথা ভুলিয়ে দেয় প্রাকৃতিকভাবেই। গবেষণা বলছে, হাসলে আয়ু বাড়ে, হার্ট ভাল থাকে, ওজন কমে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, হজম ভাল হয়, ভাল থাকে ফুসফুস, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়, রাতের ঘুম ভালো হয়, শরিররের নানান ব্যথা কমতে থাকে। জোকস এবং রম্য সাহিত্য পড়লে, জীবনে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবলে, প্রাণ খুলে আড্ডা দিলে, গান শুনলে, সিনেমা দেখলে, ব্যায়াম করলে, হাঁটলেও হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে।
২. ব্যায়াম বা হাঁটা শুধু আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে না। এটি আমাদের শরীরের পাশাপাশি, মনের উপরও প্রভাব ফেলে। হাঁটা বা ব্যায়ামের সময় প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয় হ্যাপি হরমোন, যার জন্য ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন হালকা হয়। নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটা এন্ডোরফিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়। মানসিক শক্তি, ভালো মেজাজ এবং সামগ্রিকভাবে ভালো থাকার অনুভূতি দেয় ব্যায়াম। যিনি যত প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন, তার শরীরে তত বেশি সেরোটোনিন উৎপন্ন হবে। সকালবেলায় কিছুক্ষণ রোদে বসে থাকা, হাঁটা বা ব্যায়াম করা, সাঁতার কাটা, সাইকেলিং করা এবং যোগব্যায়ামের অভ্যাস করলে শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ঘরের বারান্দায় শখের বাগানে একটু পানি দেওয়া বা কিছুক্ষণ বসা, এগুলো মনকে ফ্রেশ রাখে আর শরীরে হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. উপযুক্ত ঘুম শরীরে হ্যাপি হরমোন বাড়াতে এবং স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে সাত/ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুমের যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪. প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে আমরা নিরাপদ বোধ করি। ভালো লাগার অনুভূতি জাগে। তখন শরীরে ডোপামিন ও এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। সপ্তাহ শেষে, এক দিন অন্তত চেষ্টা করতে হবে, প্রিয় কোনো মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে। আড্ডা, গান, একসঙ্গে খাবার খাওয়ার মতো কাজগুলো হ্যাপি হরমোন উৎপাদন করে। হাতে সময় থাকলে কাছের মানুষটির সঙ্গে কোথাও ঘুরতে আসা যেতে পারে। কাজের মাঝেও বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য সময় বার করে নিতে হবে। আড্ডা, আলাপ-আলোচনা করলে মেজাজ ভাল থাকে, মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে।
৫. প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার, হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক খাবারগুলো যোগ করতে হবে। দই, কলা, বেরি বা জাম জাতীয় ফল, চিয়া বীজ, পালং শাক, সবুজ শাক সবজি ও ফলমূল, বিভিন্ন রকমের ডাল ও মটরশুঁটি, রসুন/পেয়াজ, বিভিন্ন রকমের বাদাম, মাছ, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
৬. ইতিবাচক স্মৃতিগুলো মনে করা যেতে পারে। হতে পারে কোনো ছুটির দিনে কাটানো বিশেষ মুহূর্ত কিংবা বিয়ের অ্যালবাম দেখা, যা আনন্দ অনুভূতি দেয়, সেসব স্মৃতিই রোমন্থন করা যেতে পারে। এতে সেরটোটিন হরমোন নিঃসৃত হতে সাহায্য করবে।
অত্যধিক স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, জীবনের আয়ু হ্রাসকারী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। যেকোনো মানসিক সমস্যা বা মানসিক চাপে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
দেখা যায় , একটা বয়সে আসার পর কিংবা কাজ থেকে অবসর গ্রহণের পর, অনেকেই মানসিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে সারাসদিন ঘরে বসে না থেকে, নানা কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে পারেন। কারণ শরীর সক্রিয় থাকলে স্বাস্থ্য সহজে ভেঙে পড়ে না। বাগান করা, সেলাই করা, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া, গান শুনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখলে, সময় ভালো কাটবে, মনটাও ফুর্তিতে থাকবে। অবসরগ্রহণের পর, নিষ্ক্রিয় থাকলে মন ভেঙে পড়ে, দেখা দিতে পারে নানা মানসিক ও শারীরিক সমস্যা।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…… তিনা শুভ্র ।।
