সুপার-ডিটারমিনিস্যম অনুযায়ী, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব নির্ধারিত আছে। আইনস্টাইনের পক্ষপাতিত্ব ছিল এই ধারণার ওপর। তার মানে, মানুষের ফ্রি-উইলের ধারণা একটা বিভ্রান্তি, নিজের জীবনের পথ বেছে নেয়ার ক্ষমতা মানুষের নেই।
আমাদের ধর্ম-ও বলে যে ভবিষ্যৎ পূর্ব-নির্ধারিত, যা মূলত সুপার-ডিটারমিনিস্যমকেই সমর্থন করে। কিন্তু আমাদের ধর্ম এটাও বলে যে মানুষের বেছে নেয়ার ক্ষমতা আছে, মানে মানুষের ফ্রি-উইল আছে।
তাহলে কোনটা সত্য? মানুষের ফ্রি-উইল আছে নাকি নেই?
আসলে মানুষের ফ্রি-উইল আছে, আবার নেই। মানুষের শরীরের, তার জীবনের ঘটনাবলীর, তার কাজ-কর্মের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই। এইগুলি সব পার্থিব সংশ্লিষ্টতা। এইসবের ক্ষেত্রে তার ফ্রি-উইল নেই।
কিন্তু তার নিয়তের, তার ভালোবাসার, তার পক্ষপাতিত্বের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ আছে। অর্থাৎ একজন পাপে লিপ্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব পুণ্যকে ভালোবেসে বেহেশতে যাওয়ার, আবার একজন পুণ্যে লিপ্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব পাপকে ভালোবাসার কারণে দোজখে যাওয়ার। যেহেতু এইসব ঘটে মানুষের অপার্থিব অস্তিত্বে, তার মানে তার নন-ফিজিক্যাল রিয়ালিটিতে মানুষের ফ্রি-উইল আছে।
মানুষের কাজের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই, যেহেতু সেটা তার পার্থিব বাস্তবতার অংশ। কিন্তু তার নিয়তের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আছে যেহেতু নিয়ত অপার্থিব জগতের অংশ।
হয়তো এজন্যই আমাদের ধর্মে বলা আছে, আমল বা কর্ম নির্ধারিত হয় নিয়ত বা উদ্দেশ্য দ্বারা।
অর্থাৎ মানুষের বেহেশত-দোজখ নির্ধারিত হবে নিয়ত দ্বারা, কর্ম দ্বারা না। কারণ, কর্ম পার্থিব, আর নিয়ত অপার্থিব।
তার মানে, অদৃশ্য-অপার্থিব একটা পৃথিবী নিশ্চয়ই প্রবাহিত হয় দৃশ্যমান-বাস্তব পৃথিবীর সমান্তরালে। আর একটা প্রবাহ আরেকটা প্রবাহকে কখনোই অতিক্রম করে না, যেরকম আর-রহমান সূরাতে বলা হয়েছে।
