সারাদিন পর রাতে ঘুমাতে গেলেন। ঘুমে চোখ দুটো কেবল লেগে আসছে। এমন সময় মনে হচ্ছে, কোনো পাহাড় বা সিঁড়ির উঁচু উঁচু ধাপ থেকে, আপনি পড়ে যাচ্ছেন। বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করতে করতে, পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো।।… … আপনি কি কখনো এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন? কেন এই সমস্যা হয়? এটা কি কোন রোগ? আর সমাধান কি??? ………………………..

ঘুমের মধ্যে এই হঠাৎ চমকে ওঠা বা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠাকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে হিপনিক জার্ক বা মায়োক্লোনিক জার্ক। এটা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। চিকিৎসকরা মনে করেন, প্রায় ৬০/৭০ শতাংশ মানুষ, এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এবং তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ঘুমের মধ্যে এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন।

হিপনিক জার্ক মূলত কোনো স্নায়বিক সমস্যার কারণে হয় না। আর এটা সবসময়ও হয় না। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অবসাদ বা নিত্যদিনের ঘুমের অনিয়ম, রাত জাগার বদভ্যাস, ওভার টায়ার্ডনেস বা অতিরিক্ত খাঁটুনী, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনের অভাব এই সমস্যাগুলো থেকে হিপনিক জার্ক হতে পারে।

আমাদের দেহ ঘুমিয়ে যাওয়ার আগেই যদি স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয়, তখন আমাদের ব্রেইন, অনেকটা ঝাঁকি দিয়ে, জাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, যেটা হলো হিপ্নাগোগিক জার্ক। পুরো ব্যাপারটা হচ্ছে, শরীরে তন্দ্রাচ্ছন্ন বা ঘুম ঘুম ভাব এলে, পেশিগুলো কিংবা হাত পাগুলো ধীরে ধীরে অবশ হতে থাকে এবং শরীর একটা আরামদায়ক প্যারালাইজড বা স্থির অবস্থায় চলে যায়। কিন্তু আমাদের ব্রেইন অবশ বা প্যারালাইজড হয় না। ব্রেইন তার কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকে। আর হঠাৎ করে শরীরের এই প্যারালাইজড অবস্থাকে, ব্রেইন বুঝে উঠতে না পেরে, প্রক্রিয়াটিকে থামানোর চেষ্টা করে। ফলে ব্রেইন ও শরীরের পেশিগুলোর মধ্যে, একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ব্রেইন তখন, কিছু বুঝতে না পেরে তড়িঘড়ি করে, অনেকটা ঝাঁকি দিয়ে, শরীরকে, জাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর এই ঝাকিটাই হলো ‘হিপনিক জার্কস’।

অনেকেই হিপনিক জার্ককে শারীরিক সমস্যা ভেবে ভয় পান। তবে চিকিৎসকদের মতে, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। হিপনিক জার্ক কোনো রোগ নয়, এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। হিপনিক জার্কের কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ নেই। কিছু নিয়ম মেনে চললে, হিপনিক জার্ক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তবে কারও বেলায় ঘন ঘন এই সমস্যা হতে থাকলে, তার অবশ্যই ডাক্তারের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। সাধারণত, জীবনযাত্রা পরিবর্তন, নিয়ম করে রাতে ঘুমানো, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা, খুব সহজেই হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তি দিতে পারে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।।

Sent 3m a

Leave a comment