আফসার চৌধুরী ফেরেশতার মতো মানুষ। ফেরেশতাদের মতোই তিনি সবাইকে বিশ্বাস করেন, এই ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসেও। ফলে যেদিন তিনি তফসির আলী হুজুরের কাছে শুনলেন, তাজউইদ অর্থাৎ সঠিক উচ্চারণ ছাড়া কোরান এবং দোআ পাঠের অর্থ বদলে যেতে পারে, সেদিন থেকে তার আতঙ্কের সীমা-পরিসীমা রইলো না। বিশেষ করে কলেমা তয়িবা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার সময় “লা”-বলতে হবে টেনে, তিনবার শাহাদাতের আঙ্গুল বন্ধ করতে আর খুলতে যে সময় লাগে সেটুক সময় পর্যন্ত “লা” টেনে বলা ওয়াজিব।
সেই থেকে প্রতিদিন তিনি প্রাকটিস করলেন, কিভাবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সঠিক উচ্চারণে বলা যায়। প্রাকটিস করলেন, কারণ কখন কার মৃত্যু এসে যায় তা বলা কারো পক্ষেই সম্ভব না। আর কে না জানে, মৃত্যুর আগে যে ব্যক্তি এই কলেমা ঠিকমতো পড়তে পারবে, সে নিশ্চিত বেহেশতে যাবে।
এভাবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবং দীর্ঘদিন ধরে সঠিক উচ্চারণে কলেমা প্রাকটিসের পর আফসার সাহেবের মৃত্যুর দিনটা চলে এলো। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হতেই স্ত্রী শিরিন, ছেলে নাহিদ, আর মেয়ে নাদিয়া তাকে ঘিরে ধরলো। ভিড়ের ভেতর আরো ছিল তার শালা-শালী, বড় ভাই-ভাবি, আর মালাকুল মাউত।
মৃত্যুপথযাত্রী তার মৃত্যুর পূর্বাভাস বুঝতে পারে, তাই তিনি প্রাকটিস অনুযায়ী কলেমা পড়তে শুরু করলেন। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে, ডান হাতের শাহাদাতের আঙ্গুল তুলতে কষ্ট হচ্ছিলো বলে তার “লা” উচ্চারণ করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছিলো। অনেক চেষ্টার পর আফসার সাহেব তিনবার আঙ্গুল তুলতে পারলেন, কিন্তু ততক্ষনে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে, ফলে “লা ইলাহা” বলার পর আর কিছু যোগ করার আগেই তার মাথা একদিকে ঢলে পড়লো।
সেই থেকে আফসার সাহেবের আত্মীয় স্বজনরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো।
প্রথমভাগ বললো, মৃত্যুর আগে “লা ইলাহা” বলার কারণে তিনি দোজখে যাবেন, কারণ “লা ইলাহা”-র অর্থ হলো “উপাস্য নেই”। এটা রীতিমতো নাস্তিক হয়ে মৃত্যুবরণ, এই দলটা দাবি করলো। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন আফসার সাহেবের বড়ো ভাবি। ইদানিং মহিলা-হালাকায় যোগ দিয়ে উনি ধর্মের খুঁটি-নাটি সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল হতে পেরেছেন।
আত্মীয়দের দ্বিতীয়ভাগ বললো, না, উনি ভালো মানুষ ছিলেন, এবং উনার নিয়ত ছিল কলেমা বলার। খোদা যেহেতু মানুষের মনের খবর জানেন, সুতরাং পুরো কলেমা বলতে না পারার কারণে তার সমস্যা হওয়ার কথা না। এই দলের নেতৃত্বে ছিল উনার স্ত্রী শিরিন আর মেয়ে নাদিয়া।
উনার শালা-শালী নিরপেক্ষ ছিল। আর বড়ছেলে নাহিদ দাফনের ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে বিতর্কে অংশ নিতে পারলো না।
আজ আফসার সাহেবের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু এই দুই দলের বিতর্ক, যে কোন কারণেই হোক, আজ অবধি সমাপ্ত হয় নি।
