রিচ ফুড কি ? এটা কি ক্ষতিকর? কোন খাবারগুলো রিচ ফুড? রিচ ফুড এড়াতে করনীয় কি?…..

……………।।

রিচ ফুড বলতে কি, অনেক টাকা দিয়ে কেনা বা দামি দামি খাবারকেই বুঝায়??

ব্যাপারটা আসলে মোটেই টাকা বা দামের সাথে জড়িত নয়। এটা আসলে ক্যালরি বা শক্তির সাথে সম্পর্কিত। একটু সহজ করে বলি..

আমরা আমাদের শরীরের জন্য, সবচেয়ে বেশি শক্তি বা ক্যালরি পাই তেল এবং তেল / চর্বি জাতীয় খাবার থেকে। তারপর পাই, শর্করা বা চিনি, এবং প্রোটিন থেকে।

রিচ ফুড বলতে বোঝায়, প্রচুর শক্তি বা ক্যালরিতে ঠাসা খাবারগুলো। এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে তেল এবং তেল/ চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে। আর এ কারণে, এই খাবারগুলো অল্প খেলেই পেট ভরে যায়। প্রচুর তেল, ঘি, মশলা শর্করা এবং প্রোটিন যুক্ত এই ধরনের খাবার খেতে সুস্বাদু হলেও মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

রিচ ফুড এ , অতিরিক্ত তেল/ চর্বির কারণে, শরীরে প্রচুর ক্যালোরি প্রবেশ করে। এই অতিরিক্ত তেল/ চর্বি তখন শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে।
নিয়মিত রিচ ফুড খেলে, শরীরে ধীরে ধীরে দেখা দিতে থাকে, স্থুলতা, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, স্ট্রোক সহ নানাবিধ ভয়ঙ্কর সমস্যা।

রিচ ফুড এর উৎস কি?

১। রিচ ফুড এর প্রধান উৎস হল, প্রাণী থেকে আসা খাবারগুলো। যেমন, গরু/ খাসি/ ভেড়ার মাংস, ভুঁড়ি, মগজ, মুরগির চামড়া, ফুল ক্রিম দুধ, অতিরিক্ত মুরগির ডিম খাওয়া, ঘি, বাটার, ডালডা, পনির, চকোলেট ইত্যাদি।

২। রিচ ফুড এর আরেকটি প্রধান উৎস হল, শর্করা এবং চিনি জাতীয় খাবার। যেমন, সাদা ভাত, সাদা রুটি, চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় সকল খাবার, মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টি ফল, কোল্ড ড্রিঙ্কস, জুস, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, চিনি মেশানো স্মুদি ইত্যাদি।

৩। রিচ ফুড এর পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে, উদ্ভিদ উৎস থেকে আসা প্রায় সকল খাবারে । এই খাবারগুলোতে তেল/ চর্বির পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাই, এগুলোতে শক্তি বা ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম হয়। উদ্ভিদ থেকে আসা খাবারে কোন কোলেস্টেরল থাকে না। এগুলোতে থাকে প্রচুর খাদ্য আঁশ বা ফাইবার, যা শরীরের সুস্থতার জন্য জরুরি।

যেকোনো ধরনের দাওয়াত, জন্মদিন, বিয়ে বাড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার গুলোতে, রিচ ফুড থাকে প্রচুর।

রিচ ফুড এড়াতে করণীয় কি?

১। চেষ্টা করুন, প্রাণী উৎস থেকে আসা খাবারগুলো, যথাসম্ভব কমিয়ে দিতে।

২। চেষ্টা করুন, উদ্ভিদ উৎস থেকে আসা খাবারের পরিমাণ, যথাসম্ভব বাড়িয়ে দিতে।

৩। খাবারে তেলের ব্যাবহার, ধীরে ধীরে কমিয়ে দিন। আর এক্ষেত্রে সয়াবিন তেল, ক্যানলা তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি, যেগুলো উদ্ভিদ থেকে আসে, সেই তেলগুলো ব্যাহার করুন। ঘি, ডালডা, বাটার , গরু/ খাসি/ ভেড়ার চর্বি ইত্যাদি, যেগুলো প্রাণী উৎস থেকে আসে, সেই তেলগুলো ব্যাবহার বাদ দিয়ে দিন।

৪। রান্নায় তেল কম ব্যাবহার করার জন্য, এয়ার ফ্রাইয়ার, গ্রিল, ভাপে সিদ্ধ, বারবিকিউ করে খেতে পারেন। ইদানীং ইউ টিউবে, কম তেলে রান্না করার নানান ভিডিও পাওয়া যায়। চাইলে সেগুলো দেখে নিতে পারেন।

৫। চেষ্টা করুন, সব ধরনের খাবার, বাসায় নিজ হাতে, কম তেলে রান্না করতে। কেননা, দাওয়াত বা বিয়েবাড়ির রান্নায় প্রচুর তেল/ চর্বি ব্যবহার হয়ে থেকে।

৬। এগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন তিন/ সাড়ে তিন লিটার পানি পান, রাতে ৭/৮ ঘণ্টা একটানা ঘুম, এবং প্রতিদিন ৮/১০ হাজার কদম হাঁটা নিশ্চিত করুন।

৭। যদি কারো কোনও মানসিক সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।।
….

Leave a comment