কোন খাবারগুলো ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুড? কেন এরা ক্ষতিকর??

………………………

যে খাবারগুলো বানাতে বেশী সময় লাগে না, বা আগে থেকে বানিয়ে রাখা যায় কিংবা কিছুটা বানিয়ে রেখে রান্নাটা এগিয়ে রাখা যায়, সেগুলোকেই বলে ফাস্টফুড। এই খাবারের তালিকায় স্যান্ডউইচ, পিৎজা, নুডলস, বার্গার, চাইনিজ, স্যালাদ, স্মুদি, সিরিয়াল, লাচ্ছি, সিঙ্গারা, পুরি, সমুচা, ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে।
ফাস্টফুড খেতে ভীষণ সুস্বাদু এবং দামও তুলনামুলক ভাবে কম। তবে ফাস্ট ফুডে দ্রুত ক্ষুধা মিটলেও, অতিরিক্ত তেল দিয়ে বানানো এ ধরনের খাবারগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। চাইলে, এই ধরনের ফাস্ট ফুড বাড়িতে বানিয়েও খেতে পারেন।

জাঙ্ক ফুড হল প্যাকেট/ টিন/ বোতলজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। এই জাঙ্ক ফুড, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, প্রিজারভেটিস দিয়ে, প্যাকেটবন্দি করে বাজারজাত করা হয়।

জাঙ্কের অর্থই হল আবর্জনা। জাঙ্ক ফুডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে এবং পুষ্টির নামমাত্র সেখানে থাকে না। এই ধরনের খাবারে ভিটামিন, মিনারেল বা ফাইবার বা উপকারী খাদ্য উপাদান খুবই কম পরিমাণে থাকে, আর অত্যধিক পরিমাণে থাকে, সোডিয়াম, চিনি, ক্যামিক্যাল, প্রিজারভেতিভ ইত্যাদি। এর মধ্যে পিৎজা, বার্গার, নুডলস থেকে শুরু করে কোল্ড ড্রিংক্স, চিপস, চকোলেট, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট, চানাচুর, আচার, জ্যাম/জ্যালি, ইত্যাদি সবই রয়েছে। মোট কথা, প্যাকেট করা প্রায় সকল খাবারই হল জাঙ্ক ফুড।

আপনি চাইলে, খুব সহজেই এই খাবারগুলো বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারেন। বর্তমানে, ইউ টিউবে, এসব খাবারের নানান রেসিপি পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো দেখেও বাসায় বানিয়ে নিতে পারেন।

কেন ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুড ক্ষতিকারক??

আমরা অনেক সময়ই নামকরা বড় বড় দোকান বা রেস্টুরেন্ট থেকে, এইসব খাবার কিনে খেয়ে থাকি। ঐ সব দোকানের জাঁকজমক পরিবেশ ও বিজ্ঞাপন দেখে, আমরা নির্ভয়ে ওদের তৈরি খাবার খেয়ে থাকি। ব্যাপারটা কিন্তু আসলে মোটেই তাই না। কেননা,

১। দোকানদার বা রেস্টুরেন্ট ওয়ালারা, এই খাবারগুলো, একই তেলে, বারে বারে রান্না করে। তারা কক্ষনই একবার রান্না করা তেল ফেলে দেয় না। দেখা যায়, দিনের পর দিন, তারা ঐ ব্যাবহৃত তেলে, আরও নতুন তেল মিশিয়ে রান্না করতে বা ভাজতে থাকে।
আপনি কি জানেন, একবার রান্না করা তেল, পুনরায় রান্না করলে, সেখানে কিছু ক্ষতিকর ক্যামিকেলের সৃষ্টি হয়, যা অনেকাংশই শরীরের নানা ধরনের ক্যান্সার সহ জটিল রোগের প্রধান কারণ।
আর এজন্য, বাসায় রান্না করার পর, বেঁচে যাওয়া তেল, পুনরায় ব্যাবহার না করে, তা ফেলে দেয়া উচিত।

২। এইসব রেস্টুরেন্টে খাবারে, স্মোকি টেস্ট আনার জন্য কিংবা টেস্ট বাড়ানোর জন্য, খাবার অতি উচ্চ তাপে রান্না করা হয়। অতি উচ্চ তাপে, তেল রান্না করলে, তেলের গুনাগুণ নষ্ট হয়ে, ক্ষতিকারক কিছু ক্যামিক্যাল তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর খারাপ।
আর এজন্য, এসব খাবার নিজ বাসায়, কম থেকে মাঝারি তাপে রান্না করা উচিত।

৩। দোকানদাররা, খাবারকে আকর্ষণীয়, লোভনীয় করার জন্য, কিংবা খাবারকে দীর্ঘক্ষণ চকচকে, মচমচে দেখানোর জন্য, খাবারে নানা রকমের রঙ, সুগন্ধি, প্রিজারভেটিভ, ক্যামিক্যাল ব্যাবহার করে থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৪। রেস্টুরেন্ট বা প্যাকেটের খাবারগুলো সাধারণত, ডুবো তেলে ভাঁজা হয় কিংবা অস্বাস্থ্যকর সস্তা তেলে রান্না করা হয়। যা পরবর্তীতে শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, আপনার উচিত হবে, বাসায় খাবার রান্না করে খাওয়া এবং, রান্নার ক্ষেত্র, তেলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে এয়ার ফ্রাইয়ার, ওভেন, গ্রিল, বারবিকিউ ইত্যাদি ব্যাবহার করা যেতে পারে। আর তেল ব্যাবহারের ক্ষেত্রে, উদ্ভিদ উৎস থেকে আসা তেল গুলো ব্যাবহার করুন। কারণ, উদ্ভিদ থেকে আসা তেলে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে না। কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, শুধুমাত্র প্রাণী উৎস থেকে আসা খাবারগুলোতে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।।

Leave a comment