শুধুমাত্র জং বা মরিচা ধরা লোহায়, হাত কাটলেই কি টিটেনাস হয়???

…………

যখন আমাদের শরীরের কোন অংশ, লোহায়, বিশেষ করে জং বা মরিচা ধরা লোহায় কেটে যায়, তখন আমরা টিটেনাস ইনজেকশন নেয়ার জন্য, ডাক্তারের কাছে ছুটে যাই।

যদিও জং বা মরিচা, নিজে টিটেনাস সৃষ্টি করে না, তবে মরিচায় জমে থাকা বস্তুগুলি, প্রায়শই বাইরে খোলা অবস্থায় থাকে। আর এদের সাথে মিশে থাকতে পারে টিটেনাসের জীবাণু।

কারও যদি, কোথাও কেটে যায় বা কোনও ক্ষত থাকে, আর তিনি যদি সেটা ঠিকমতো পরিষ্কার না করেন এবং কোনও নোংরা জায়গা থেকে ক্ষতটি সংক্রমিত হয়, তা হলে সেই ব্যক্তির টিটেনাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

যেকোন খোঁচা, পোড়া, কাটা, পশুর কামড় বা ক্রাশ ইনজুরি সহ, ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, ত্বকের যেকোনো আঘাতের পরে, আপনার টিটেনাস সংক্রমণ হতে পারে, যদি সেখানে জীবাণু থেকে থাকে।

এই রোগের জীবাণুর নাম ক্লস্ট্রিডিয়া টিটানি। মলের মধ্যেই এই জীবাণুর অবস্থান। এরা স্বাভাবিকভাবে, মল দ্বারা দূষিত মাটি, নোংরা পাথর, রাস্তা ইত্যাদিতে বাসা বাঁধে। এটি উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে জলবায়ুতে, জৈব-সার সমৃদ্ধ মাটির জায়গাতে বেশি দেখা যায়। কারণ এই জীবাণু বাস করে, ঘোড়া, ভেড়া, গবাদি পশু, কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, গিনিপিগ এবং মুরগির মতো বহু প্রাণীর, অন্ত্রে ও মলে। তাই শরীরের কোন অংশ কেটে গেলেই, সেখানে টিটেনাসের জীবাণু ঢুকে যেতে পারে। এটা যে শুধু জং ধরা লোহায় কাটলে হবে, তা কিন্তু নয়। সামান্য সুঁই বা সেফটিপিনের খোঁচাতে, চামড়ায় যে ক্ষত হয়, সেখান দিয়েও জীবাণু শরীরে ঢুকে যেতে পারে।

গুলির আঘাতের ক্ষত, বা শরীরে ছিদ্র, ইনজেকশনের ওষুধ, ট্যাটু বা স্প্লিন্টার থেকে খোঁচা ক্ষত, পোড়া, যৌগিক ফাটল, সংক্রমিত পায়ের আলসার, অস্ত্রোপচারের ক্ষত, দাঁতের সংক্রমণ, পোকামাকড় বা পশুর কামড় ইত্যাদি নানা ভাবে, আপনার টিটেনাস হতে পারে। আর এজন্যই শরীরে কোন রকম ক্ষত দেখা দিলেই, সাথে সাথে তা ভালমতো পরিষ্কার করা বাধ্যতামূলক।

কিভাবে টিটেনাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে ?

টিটেনাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হল, সময়মতো টিকা দেওয়া।

রোগটি প্রায় শুধুমাত্র তাদের মধ্যে দেখা যায়, যাদের ঠিকমত টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়নি।

সাধারণত জন্মের পরেই, শিশুদের টিটেনাসের টিকা দেওয়া হয় । আর এর পুরো প্রক্রিয়াই চলে, সরকারি নির্দেশানুযায়ী। পরবর্তীতে আরও কিছু বুস্টার ডোজ়ও, দেয়া হয়ে থাকে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক, যিনি কখনও টিকা দেননি তাদের, টিটেনাস টিকা সম্পর্কে জানতে, একজন স্বাস্থ্যসেবক বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আবার, টিটেনাস ইনজেকশন বা ভ্যাক্সিন নিয়ে আমাদের চিন্তার কোন শেষ নেই। কোথাও কেটে গেলে, তার ঠিক কতক্ষণ পর ইনজেকশন দিতে হবে কিংবা কয়টা ডোজ দিতে হবে ইত্যাদি প্রশ্ন, আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে।

এক্ষেত্রে অন্য সকল চিন্তা বাদ দিয়ে, শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে, সাথে সাথে সেটা, ভালোভাবে পরিষ্কার করেই, ডাক্তারের শরান্নপন্ন হওয়া উচিত। আপনার ডাক্তারই কেবলমাত্র আপনার জন্য, সঠিক ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

শুনা যায়, আগেকার দিনে বাড়িতে সদ্যোজাত সন্তান জন্মানোর পরে, অনেক জায়গাতেই শিশুর নাড়ী কাটার সময়, সেখানে গোবর ও মাটির প্রলেপ লাগানো হত। আর ওই গোবর ও মাটিতে থাকতো টিটেনাসর জীবাণু। এটা থেকে টিটেনাস হয়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটি মারা যেত। এই রীতি এখন আর চালু নেই। তা ছাড়া, রোগটির প্রকোপও এখন সে ভাবে দেখা বা জানা না গেলেও, টিটেনাস অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই, এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment