মেনোপজ, বলতে আসলে কি বুঝায়? কেন হয় বা কখন হয়? 

আতংকিত না হয়ে, পুরো ব্যাপারটি জেনে নিন ও অন্যকে জানান…।          ( মেনোপজ,১ ) 

……………………………..

মেনোপজ বলতে সেই সময়কে বোঝায়, যখন একজন মহিলার মাসিক চক্র বা পিরিয়ড, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

 এই পর্যায়ে, একজন মহিলার ডিম্বাশয়, ডিম ত্যাগ করা বন্ধ করে দেয়,  যা সাধারণত মহিলাদের  40 এর দশকের শেষের দিকে বা 50 এর দশকের শুরুতে ঘটে।

তবে কিছু মহিলাদের মধ্যে মেনোপজ আগেও হতে পারে।

যখন একজন মহিলার শেষ মাসিকের পর, 12 মাস ধরে একটানা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হয় না, তখন বলা হয়, সে মেনোপজের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। যেহেতু ডিম্বাশয় ডিম ত্যাগ করা বন্ধ করে দেয়, তাই তখন মহিলা আর স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে পারেন না।

45-55 বছর বয়সী মহিলাদের স্বাভাবিকভাবেই মেনোপজ হয়। এটি কোনও ব্যাধি বা রোগ নয়, তাই বেশিরভাগ মহিলাদের কোনও চিকিৎসার  প্রয়োজন হয় না।

প্রত্যেক নারীই নির্দিষ্ট সংখ্যার ডিম্বাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর, প্রতি মাসে একটা-একটা করে ডিম ফোটে আর ঋতুস্রাবের সময় বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। এই কারণে মহিলাদের বয়স যত বাড়ে, ততই শরীরে ডিমের সংখ্যা কমে আসতে থাকে। এভাবে ডিম কমতে কমতে, একসময় ডিম্বাশয় সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন নামক যে হরমোনদ্বয় ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণ করত এতদিন, তা উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ডিম্বাশয়ে। শেষ হয়ে যায় ঋতুস্রাব চক্র। পরিসমাপ্তি ঘটে প্রজনন বয়সের।

একজন মহিলার ঋতুস্রাব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার আগে, তিনি তার হরমোনের মাত্রার  কিছু পরিবর্তন বুঝতে পারেন। বিশেষ করে, প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা। এই সময়ে, হঠাৎ তীব্র তাপের বা গরমের অনুভূতি হতে পারে, প্রায়শই ঘাম এবং হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে, ঘুমের সময় অতিরিক্ত ঘাম, হাত পা জ্বালা পোড়া করা, যা ঘুমের ধরণকে ব্যাহত করতে পারে। কিংবা অল্পতেই বিরক্তি, খিটমিটে  মেজাজ, রাগ, আকস্মিক মেজাজের পরিবর্তন ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।   কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার আগে, অল্প কিংবা  ভারী রক্তপাত হতে পারে এবং পিরিয়ডের সময়কাল বাড়তে পারে।

মেনোপজ যেকোনো মহিলার জীবনের একটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তখন শারীরিক ও মানসিক, অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করা এবং উপযুক্ত যত্ন নেওয়া, ভীষণ জরুরি, যা নারীর জীবনের মান, উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে।

অনেক মহিলাই,  মেনোপজ মেনে নিতে পারেন না, বিশেষ করে, যাদের তাড়াতাড়ি মেনোপজ হয়। সাধারণত 45 বছর বয়স থেকে মেনোপজ হলেও, অনেকের ক্ষেত্রে 40 এর পরেই মেনোপজ হয়ে যায়। সে কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন অনেকে। যাদের সন্তান নেই, বিশেষ করে সেই নারীদের ওপর মারাত্মক মানসিক প্রভাব পড়তে দেখা যায়। তাই, যদি আগে থেকেই, এবিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায় এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যায়, তাহলে অনেকাংশেই, মেনোপজের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। 

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই, এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা। 

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

……তিনা শুভ্র । 

                                                       …… ( চলবে )

Leave a comment