লাইফ সাপোর্ট আসলে কি? চলুন জেনে নেই …। ………………………………

লাইফ সাপোর্ট আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণ মানুষ এ শব্দটি প্রায়ই শোনেন, কিন্তু এর সঠিক অর্থ, ব্যবহারের ক্ষেত্র, উদ্দেশ্য এবং আইনগত দিক নিয়ে, অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা রয়েছে।

লাইফ সাপোর্ট হলো, এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেখানে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি, বা পরিপাকতন্ত্র, সঠিকভাবে কাজ না করলে, কৃত্রিম যন্ত্র ও চিকিৎসার সাহায্যে, রোগীর জীবন অটকে রাখা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য, রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা নয়, বরং শরীরকে সময় দেওয়া, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ, আবার কাজ শুরু করতে পারে অথবা প্রয়োজনে প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) করা যায়।

লাইফ সাপোর্টের ধরনঃ

হাসপাতালে সাধারণত, এই চারভাবে লাইফকে সাপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে, যেমন,

১. ভেন্টিলেটর: শ্বাস নিতে সাহায্য করে।

২. ডায়ালাইসিস: কিডনির কাজ করে।

৩. সিপিআর/কার্ডিয়াক সাপোর্ট: হার্ট থেমে গেলে চালু করার চেষ্টা।

৪. কৃত্রিম পুষ্টি ও ফ্লুইড সাপোর্ট।

লাইফ সাপোর্ট নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাঃ

অনেকেই মনে করেন, লাইফ সাপোর্ট মানেই, রোগীর কোনো আশা নেই। মেশিন খুললে রোগী মারা যাবে কিংবা লাইফ সাপোর্ট মানেই, মৃত্যুকে কৃত্রিমভাবে পিছিয়ে দেওয়া… ইত্যাদি। আসলে সবসময় তা নয়। অনেক রোগী, লাইফ সাপোর্ট নিয়ে, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অনেকের ক্ষেত্রে এটি সাময়িক সহায়তা মাত্র, যা রোগীকে সুস্থ হবার মতো সময় দেয়।

আইনগত ও নৈতিক দিকঃ

লাইফ সাপোর্ট বন্ধ বা চালু রাখার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সংবেদনশীল। রোগী সচেতন থাকলে, সিদ্ধান্ত তার নিজের। অচেতন বা সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে, নিকট আত্মীয় এবং চিকিৎসক দল মিলে সিদ্ধান্ত নেন। উন্নত দেশে, এর জন্য আনুষ্ঠানিক কমিটি বা আইনগত নীতিমালা আছে। আর এটার মূল লক্ষ্য সবসময় রোগীর কল্যাণ করা, কোনোভাবেই অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দীর্ঘায়িত করা উচিত হবে না।

লাইফ সাপোর্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আশীর্বাদ। এটি রোগীকে মৃত্যু থেকে, ফিরিয়ে আনার চেষ্টা নয়, বরং শরীরকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। সঠিক তথ্য ও সচেতনতা থাকলে রোগী, পরিবার এবং সমাজ, সবাই এ বিষয়ে আরও যুক্তিসঙ্গত ও স্পষ্ট ধারণা পেতে পারবে।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা। যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।। …

Leave a comment