###পথের খোঁজে##০১#

০১##

SUD_9663-2

বানর আর মানুষের মধ্যে অনেক মিল থাকলেও মিশার মতে এদের মূল পার্থক্য হোল – মানুষের পছন্দ বা চয়েস করার সামর্থ্য আছে যেটা বানরের নেই। এম টি ভি তে র‍্যাপ শিল্পীদের হাত পা নাড়ানো আর তাদের  বিশেষ অঙ্গ ভঙ্গী দেখে খানিকটা কনফিউশনে পড়লেও  বিজ্ঞ্যান মনস্ক মেয়ে  মিশা এটা মেনে নিতে পারে না -বানর বিবরতনের  মধ্য দিয়ে মানুষ এ পরিণত  হয়েছে।  — এই কথা গুলো সে তার কলেজের বন্ধুদের সাথে আলোচনা করছিলো। কথা শুরু হয়েছিলো বিয়ের পরে মেয়েদের নাম পরিবর্তন করার রীতি নিয়ে। তার বন্ধুদের মতে -নাম পরিবর্তন করতে হয় -এটাই নিয়ম; কিন্তু মিশার প্রশ্ন হচ্ছে –এর জাস্টিফিকেশন নিয়ে। রীতি আছে বলেই সেটা মেনে নিতে হবে কেন? রীতিটা তো ভুলও হতে পারে.. ভুল না হলেও অপ্রয়োজনীয়ও তো হতে পারে। সেটা তলিয়ে দেখতে হবে না?

মিশা তলিয়ে দেখতে গিয়ে পেয়েছে – আদিম যুগ থেকে শুরু করে ১৮ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আইনগত ভাবে নারীদের কোনও অধিকার পাশচাত্ত্য বিশ্ব গুলোতে স্বীকৃত ছিল না । মেয়েদের স্বীকৃত অধিকার বলতে যা ছিল তা উত্তোরাধিকার সম্পত্তিকে ঘীরে এবং সেটাও প্রচলিত হয়েছিল ইসলাম ধর্ম আসার পরে; শুধুমাত্র মুসলিম দেশ গুলোতেই সেটা প্র্যাক্টিস করা হোত। তবে মেয়েদের ব্যাক্তি স্বাধীনতার ধারনাটা প্রচলিত  ছিল না কোথাও।

নবম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে একটি কমন ল (আইন ) পাশ করা হয় যেখানে মেয়েদেরকে তার স্বামীর অংশ(এক তরফা অধিকার) হিসেবে গন্য করা হয়। এজন্য সে সময় থেকে বিবাহিত মেয়েদেরকে  বাধ্য করা হয় স্বামীর নাম তাদের জন্ম নামের সাথে জুড়ে দিতে। জন্মের সময় মেয়ের নাম থাকবে বাবার নামের সাথে মিল করে, আর বিয়ের পরে মেয়ের নাম হতে হবে জামাইয়ের নামের সাথে। তখন বিশ্বে “ব্যক্তি স্বত্তা” র কনসেপ্ট শুধুমাত্র পুরুষদের ঘিরেই আবর্ত ছিল। কিন্তু এখন সভ্যতা এগিয়েছে । উনিশ দশকের মাঝামাঝি থেকে উন্নত বিশ্ব গুলোতে নারীর অধিকার  গতি পেতে শুরু করেছিল যা এখন মোটামুটি সারা বিশ্বেই কম বেশী ফলো করা হয়। একবিংশ শতাব্দীর মেয়ে হয়ে মিশা এটা মানতে পারে না যে তাকে আমৃত্যু কারো না কারো অধীনেই থেকে যেতে হবে, তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না।  এই দাসত্ত্ব  সে মেনে নিতে পারবে না। সে তার বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছে- তার মতে -যে সব মানুষ কোনও চিন্তা ভাবনা না করে প্রচলিত রীতি মেনে নেয়- তাদের সাথে বানরদের খুব একটা তফাত নেই…।

মিশা মধ্যবিত্ত বাবা মা’র  একমাত্র সন্তান । দেখতে তেমন একটা সুন্দরী না; এভারেজের তুলনায় খাটো, লম্বাটে মুখ, স্লীম। তার মায়ের ইদানিং খুব চিন্তা মেয়ের বিয়ে নিয়ে – একে তো সুন্দরী না , আবার এতো পট পট করে…মুখের কথা মাটিতে পড়ে না .. প্রশ্ন করার আগেই উত্তর দিয়ে দেয়। বাঙ্গালী মেয়ের কোনও  গুনই তার মধ্যে নেই!  একে বিয়ে করতে চাইবে কে? – টিপিকাল বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত মা দের যেমনটা চিন্তা আর কী …

বাবা মতিঝিল মডেল স্কূলএর ঈসলামিয়াতের  টিচার। তার বাবা একদিন বলেছেন -ঊনার ইংরেজীতে শিক্ষকতা করার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মিশার দাদা তাদের গ্রামের বিশিস্ট পীর সাহেব ছিলেন। তো পীর সাহেবের ছেলে ইংরেজী শিক্ষক হবে -সেটা তো মেনে নেয়া যায় না। তাই জাহাঙ্গীর নগরে ইংরেজীতে চান্স পাওয়ার পরেও মিশার বাবাকে আলীয়া মাদ্রাসায় পড়তে হয়েছিলো। মিশার বাবা মেয়েকে বলেছেন -তিনি তার মেয়ের জীবন চলার পথে বাধা হতে চান না। মিশা ছোট থেকে বড় হয়েছেও সেভাবে। বাবা তাকে  নীলখেত থেকে প্রতিমাসে “রীডারস ডাইজেস্ট” এর নতুন কপি এনে দিতেন। ব্রিটিশ কাউন্সীলের সদস্য মিশা ক্লাস সিক্স থেকে। সে রাশিয়ান কালচারের সদস্য ছিল একই সময় থেকে। বাবা সব সময়ই চান মিশা বড় হবে কুপমন্ডুক না হয়ে।  মিশা সেটার জন্য বাবার কাছে সারা জীবন ঋণী । তবে যতো বড় হচ্ছে সে- ততো সমস্যার মুখেও পড়তে হচ্ছে তাকে তার এই অনুসন্ধিৎসু মনের কারনে। তলিয়ে দেখার অভ্যাস তাকে এবং তার বাবা মা কে প্রায়ই ভোগায়।

মডেল স্কুলের মেয়েদের শাখার ইসলামিয়াতের শিক্ষিকা নাজমা আপা এসেছিলেন বেড়াতে তিন সপ্তাহ আগে । বাবার বন্ধু হলেও মিশা তাকে অন্য সবার মতই আপা বলে ডাকে।  নাজমা আপা শাড়ী পরে এসেছেন। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত একটা খয়েরী চাদর দিয়ে মূড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে; খালি মুখমণ্ডল দেখা যায়। মিশা তখন নিজের ঘরে শ্যে স্টুয়ারট মীল এর একটা বই পড়ছিল। মা এসে জানালেন নাজমা আপার কথা। নাজমা আপাকে মিশার বেশ পছন্দ। ঊনিও মিশাকে খুব আদর করেন। মিশা ভাবছে সে টী শার্টটা চেঞ্জ করে সামনে যাবে কী না।। আলসেমির জন্য শেষ  পর্যন্ত সে আর চেঞ্জ করতে পারলো না। বসার ঘরে গিয়ে আপাকে হাসি মুখে বলল -স্লামালিকুম আপা! ভালো আছেন ?

…চলবে…

One thought on “###পথের খোঁজে##০১#

Leave a reply to সৈয়দ কল্লোল Cancel reply