আঙ্কেল পল

ক্রিয়েটিভ কাজ দিয়ে যদি যে কোনও ভাবে মানুষের উপকার করা যায় – সেটার আনন্দটা অন্যরকম। ফটোগ্রাফী একটা মজার নেশা। তবে মানুষ ভিন্ন কারনে মজা পেয়ে থাকে। আমার মজা পাওয়া হচ্ছে শেয়ার করতে পারার মাধ্যমে অন্যকে উতসাহিত করতে পারার মাঝে। তবে ফটোগ্রাফীর মাধ্যমে সরাসরি মানুযের কল্যানে কাজ করতে পারলে মজাটা এক ধরনের গর্বে পরিনত হয়।
কিছুদিন আগে সেরকম একটা সুযোগ এলো। ব্রিসবেন এর বাস্তুহারাদের সাহায্যের একটা সংগঠন এর বার্ষিক ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠান আমাকে আমন্ত্রন করলো ফটোগ্রাফার হিসেবে । আমিও সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠান একটা লোকাল বার এ।
অনুষ্ঠান মুলতঃ মোটর বাইকীদের একটা শোভা যাত্রা । সকাল ১১.৩০ মিনিট প্রায় ১২০টি মোটর বাইক এলো সেই হোটেলে । নানা রঙের এবং বিচিত্র ধরনের সেই বাইক গুলো। হারলি ডেভিডসন, বি এম ডব্লিউ, ট্রায়াম্ফ ইত্যাদী বাইকে চড়া মানুষ গুলোর চেহারাগুলোও বিচিত্র ধরনের। লম্বা চুল, জীন্স, লেদার জাকেট পরা আধিকাংশ মানুষই দেখতে পাহাড়সম।
আমি এক মনে এদের ছবি তুলছিলাম। ব্যান্ড মিউজিক এর সাথে চলছে বিভিন্ন ধরনের খাওয়া দাওয়া। চলছে পানীয় গ্রহন, ধোঁয়া এবং ধূমপান । – এক উতসব বটে!
হঠাত মূল স্টেজটার উল্টা পাশে তাকিয়ে দেখি একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, সম্ভত ৭৫ বা ৮০ র কাছাকাছি হবে, উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাতে একটা পাইন্ট (বিয়ার এর গ্লাস) , কিছুক্ষন পর পর চুমুক দিচ্ছিলেন তাতে। কিন্তু উদাসী মন আর চোখ টা বারবার চলে যাচ্ছিল তার দূর আকাশের দিকে। তাকে দেখে মনে হোল তার চাওয়া পাওয়ার কিছু বাকী নেই আর। হয়তো খুবই একা একজন মানুষ! কে জানে তার মনের কস্ট! কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম তার।

ওই সংগঠনের ফেসবুক পেইজে পুরো অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করলাম সে রাতেই। তিন দিন পর এক অজানা মানুষ আমাকে মেসেজ পাঠালো।


মেসেজে জানতে পারলাম -যার ছবিটা দেখছেন সেই ভদ্র লোক -ঊদাসীন সেই মানুষটার পরিচয়। নাম – পল, সবাই উনাকে আঙ্কেল পল বলে চিনে। এই প্রবীন ছিলেন বারটির অন্যতম মধ্যমণি। তিনি আর বেচে নেই। তিনি তো নেই ই – তার পরিবার বলতে একমাত্র মেয়ে, যিনি আমাকে মেসেজ দিয়েছেন- তার মতে -গত চল্লিশ বছরে আমার তোলা সেদিনের ছবিটিই তার একমাত্র ছবি। মেয়ে বাবার ফিউনেরলে এই ছবিটা ব্যবহার করার অনুমতি চাইতেই মেসেজটা করেছেন।

মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল। খুব ইচ্ছা থাকলেও আঙ্কেল পল এর শেষকৃত্যে যাওয়া হয় নি। কিন্তু তিনি আমার সৃতিতে থাকবেন আজীবন। আঙ্কেল পল চলে গেছেন সাদা কালোর চিরন্তন দেশে, কিন্তু হাতের পাইন্টটা আজো রয়ে গেছে পৃথিবীটাকে রঙ্গীন করার প্রয়াসে।

-সৈয়দ কল্লোল [২০২০]

সেদিনের কিছু ছবিঃ

One thought on “আঙ্কেল পল

Leave a reply to সৈয়দ কল্লোল Cancel reply