
ফ্যাট ব্যাপারটা নিয়ে আমরা একটু বেশিই চিন্তিত থাকি। খাবারে ফ্যাট খেলে রক্তের ফ্যাট বেড়ে গেলো কিনা বা মোটা হয়ে গেলাম কিনা এইসব নিয়ে আমাদের ভাবনা সবসময়ই থাকে ডায়েট করা কালীন।
যাই হোক, আজকে এইসব চিন্তার অবসান হবে আশা করি।
প্রথমেই একটা কথা বলি, ডায়েটে আমরা লো ফ্যাট ডায়েট করতেই বেশি পছন্দ করি। কারন লো ফ্যাট ডায়েট ওয়েট লসের মূলমন্ত্র বলা যায় । ফ্যাট আপনি খাবেন তবে তা অবশ্যই বুঝে শুনে। যে ফ্যাট আপনার দরকার বা যা খেলে আপনার জন্যে ভালো তাই খাবেন।
আমাদের বডি মাসল এবং ব্রেইন ফাংশন এর এনার্জির উৎস কিন্তু এই ফ্যাট। তাই ফ্যাট একেবারে বাদ করা যেমন যাবে না, আবার একেবারে বেশি লখাওয়া যাবেনা।
ফ্যাট সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে,
১) স্যাচুরেটেড ফ্যাট
২) আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট
১) স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ
এই ফ্যাট রুম টেম্পেরেচারে শক্ত হয়ে যায়। এই ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো প্রানিজ খাদ্য। যেমন মাছ (চিংড়ি) লাল মাংস, ডিম (কুসুম) এইসব। এক কথায়, প্রানী থেকে যে ফ্যাট আসে সেটাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ফ্যাট আমাদের কোলেস্টেরল এবং Low-Density Lipoprotein (LDL) অর্থাৎ খারাপ ফ্যাটের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যে কারনে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যাদের এই সমস্যা আছে তাদের এই জাতীয় ফ্যাট কম খেতে হবে।
২) আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ভাল ফ্যাটঃ
ভালো ফ্যাট এর উৎপত্তি সাাাামুদ্রিক মাছ, বীজ, বাদাম এবং সবজি থেকে।
– ভালো ফ্যাট সাধারণ তাপমাত্রায় তরল।
– ভালো ফ্যাট দুই ধরনের হয়-
ক)মনো আনসাচুরেটেড এবং খ)পলি আনসাচুরেটেড।
ক) মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ
বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমান হয়েছে যে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উদাহরণ,
• বাদাম (চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম)
• ভেজিটেবেল তেল (বাদাম তেল, অলিভ তেল, সরিষার তেল)
• চিনাবাদাম মাখন ও কাঠবাদাম মাখন
খ) পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ
উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত ফ্যাট সমূহ হল এধরনের ফ্যাটের মূল উৎস। মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মত পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে রক্তে কোলেসটেরলের পরিমান কমানোর মাধ্যমে। বিভিন্ন প্রকার পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উদাহরণ দেয়া হলঃ
• বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ তেল- সূর্যমুখী তেল, সরিষার তেল, নারকেল তেল
• বীচি – (সূর্যমুখীর বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি)
• নরম মারজারিন
খারাপ ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটঃ
খারাপ ফ্যাট এর মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটকে সবচেয়ে খারাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। খারাপ বলার পেছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস। ট্রান্স ফ্যাট এর উৎপত্তি বিংশ শতাব্দির দিকে, যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” এর মাধ্যমে কঠিন পদার্থ তৈরি করে পচন রোধ করা যায়। স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” করলে উৎপন্ন দ্রব্যের পচন রোধ হয় কিন্তু তার সঙ্গে কিছু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটেরও উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার ব্যবসায়িদের জন্য বেশ লাভ জনক হয়ে উঠল। কেননা, তেল এর পচন রোধ হচ্ছে, বেশি দিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে তথা আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে । কমার্শিয়াল ক্ষেত্রে তাই ট্রান্স ফ্যাট বেশি ব্যবহার করা হয়, ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট এর প্রতিটি খাবার তাই আজ আমাদের কাছে এত লোভনীয়!
ট্রান্স ফ্যাটের কিছু উদাহরণ-
• বেকড খাবার – কেক, ডোনাট, মাফিন, পাই ইত্যাদি।
• ডুবো তেলে ভাজা খাবার, বেশি তেল জাতীয় খাবার।
কি হবে ট্রান্স ফ্যাট খেলে?
অধিক পরিমান ট্রান্স ফ্যাট খেলে ক্ষতিকর LDL এর পরিমান বেড়ে যাবে যা ভালো HDL এর পরিমান রক্তে কমিয়়ে দিবে এবং ইনসুলিন এর পরিমান রক্তে কমিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর আশঙ্কা বাড়ায়। মোট কথা ট্রান্স ফ্যাট গ্রহনে শরীর এর কোন উপকার নেই এবং মানবদেহে এর কোন চাহিদাও নেই। বর্তমানে আমাদের অগোচরে প্রতিদিনই ব্যবহার করা হয় এই ট্রান্স ফ্যাট।
তাহলে কোন ফ্যাট খাবো আর কোনটা খাবো নাঃ
১। আমরা আমাদের খাদ্যতালিকা থেকে ট্রান্স ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দেয়ার চেষ্টা করবো।
২। খাদ্যতালিকা থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দিবো না বরং কমিয়ে আনবো।
৩। খাদ্যতালিকায় আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাভাবিক পরিমাণ রাখবো।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী।
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

AlhamduliLlah, really informative
LikeLike
Thank you
LikeLike