সিম্যুলেশন

অল্পবয়সেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটা প্রোগ্রামিং ফার্মে কাজ শুরু করেছিল রাকিব। এখন পর্যন্ত চাকরীতে ভালোই করছে সে, প্রোগ্রামার হিসেবেও শহরে যথেষ্ট সুনাম আছে তার। বছর চারেক আগে চমৎকার একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে সে, বিবাহিত জীবনেও সে সম্পূর্ণভাবে সফল ও সুখী। একটা মেয়ে আছে তার, দু’বছর বয়স, মেয়েটা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু রাকিবের।

কিন্তু ইদানিং রাকিবের ভেতর একটা পরিবর্তন এসেছে, সবকিছুই কেমন যেন একঘেয়ে লাগে তার কাছে। প্রত্যেকটা দিন আসে একই ভাবে একই ছন্দে, সবকিছু ঘটে চমৎকারভাবে – যেভাবে সে চেয়েছিল। দুর্ঘটনাহীন এ জীবনকে তার খুব বেশীরকম নির্ভুল নিষ্কন্টক মনে হচ্ছিল। একপর্যায়ে তার এরকমও মনে হতে লাগল – এ জগৎটার কোথাও কোন সমস্যা আছে, নাহলে এটা তার জন্য এতোটা সুন্দর সাবলীল দুর্ঘটনাশূণ্য হতো না।

কিন্তু রাকিব কিছুতেই ধরতে পারছিল না, সমস্যাটা ঠিক কোথায়। ফলে সন্ধ্যার রাস্তায় রিক্সা দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে হতাশায় তার মনটা ভরে যেত। কিন্তু এক সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই ওর জীবনের মোড় সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে ঘুরে গেল।

রাকিব চাকরীর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও কিছু কিছু প্র্রোগ্রামিংযের কাজ করত – বাড়তি আয়ের জন্য না, শখের বশে। সেই সূত্র ধরেই ইদানিং মনজুর নামে এক ভদ্রলোক তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলো – তাকে নাকি একটা প্রোগ্রাম লিখে দিতে হবে, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত একটি বিষয় নিয়ে। সে বাজারে রাকিবের সুনাম শুনেছে এবং তার বিশ্বাস একমাত্র রাকিবই এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারবে।

রাকিবের কাছে প্রস্তাবটা একটু অদ্ভুত মনে হলেও কোন এক অজানা কারণে সে লোকটার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল। আগে থেকে ঠিক করা সময় অনুযায়ী সে ঠিকানা খুঁজে খুঁজে গিয়ে উপস্থিত হল ঐ লোকের বাসায়। নক করামাত্র মনজুর সাহেব নিজেই এসে দরজা খুলে দিলেন। রাকিব ভেতরে গিয়ে বসল।

কিছু মনে করবেন না, তেমন আতিথেয়তা করতে পারছিনা – উনি বললেন।

তা আপনার প্রজেক্টটা কি? – রাকিব সরাসরি প্রসংগে চলে এল।

ভদ্রলোক বসলেন – বলব, কিন্তু তার আগে আমার লম্বা একটা কাহিনী মন দিয়ে শুনতে হবে। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ওটার সাথে আপনার এখানকার ভূমিকাটা প্রাসংগিকই হবে। আচ্ছা, আপনি কি বাগ তৈরী করতে পারেন? এমন বাগ যা একটা পুরো প্রোগ্রামকে ধ্বসিয়ে দিতে পারে?

রাকিব শখের বশে এ ধরণের প্রোগ্রাম তৈরী করেছে। কিন্তু সে একজন ভদ্রলোক, সুতরাং এগুলো ব্যবহারের কথা চিন্তাও করেনি কখনো।

দেখুন, কোন আইনবিরোধী কাজে আমি নেই – রাকিব তাকে জানিয়ে দিল।

লোকটা হাসল – আপনার এই আইনটা প্রয়োগ হবে কোথায়?

কেন? সমাজে! রাষ্ট্রে!

আর যদি কোন কারণে সমাজটাই মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়? – সে কথাগুলো বলছিল নাটকীয় ভংগীতে। হতে পারে তার ইচ্ছা ছিল তার কাহিনী শোনার ব্যাপারে রাকিবের আগ্রহ বাড়ানো।

আমার হাতে সময় অল্প – রাকিব বলল। ভদ্রলোক তাঁর কাহিনী শুরু করলেন।

বছর পনেরো আগে আমি আর আমার বন্ধু রেমন মিলে একটা প্রোগ্রামিং ফার্ম শুরু করেছিলাম। আমাদের কাজটা একটু অন্যধরণের ছিল – আমরা চেষ্টা করছিলাম একটা সিম্যুলেশন প্রোগ্রাম তৈরী করতে যেটা হবে বাস্তবের খুব কাছাকাছি, এতটা কাছাকাছি যে দর্শকের মনে হবে – সে ঐ জগৎটার মধ্যেই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, অথচ বাস্তবে সে কিন্তু জাস্ট একটা চেয়ারে বসে আছে। মস্তিষ্কে সরাসরি যুক্ত একটা ইন্টারফেসের মাধ্যমে সে অনুভব করছে স্পর্শ, গন্ধ, বর্ণ, ধ্বণি, স্বাদ – সবকিছু। জার্মান একটা গেম কোম্পানি স্পন্সরও করছিলো প্রজেক্টটাকে।  

প্রজেক্টটার মূল ধারণাটা কিন্তু খুবই সহজ ছিল। মানুষ জগৎকে অনুভব করে মূলত পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে – চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ত্বক। যদিও শরীরের এই অংশগুলো শরীরের বাইরের দিকে থাকে, এদের সরবরাহ করা তথ্যগুলো কিন্তু শেষ হয় মস্তিস্কতেই। সুতরাং মস্তিষ্কটাতে যদি একটা ইন্টারফেসের মাধ্যমে সরাসরি এই তথ্যগুলো দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে কিন্তু কেউ বুঝবেই না যে এগুলো আসল পৃথিবী থেকে আসছে নাকি কোনো সিমুলেশন করা জগৎ থেকে আসছে।    

একজন নিউরোফিসিসিস্ট হিসেবে আমার কাজ ছিল সেই ইন্টারফেসটা তৈরী করা, আর রেমনের কাজ ছিল সিমুলেশনের ভেতর বাস্তবসম্মত পরিবেশটা তৈরী করা। আর পঞ্চান্নজন স্বেচ্ছাসেবীর মস্তিস্ক সরাসরি যুক্ত ছিল এই সিমুলেশনে – ওদের মনগুলো এই কৃত্রিম জগতে ঘুরে-ফিরে বেড়াবে, অথচ জানবেও না যে তারা ইতোমধ্যে শারীরিকভাবে মৃত।

হ্যা, আমরা পঞ্চান্নজন লোকের মস্তিস্ক ব্যবহার করেছি এই প্রজেক্টে, বেঁচে থাকার সময় তারা এর অনুমতি দিয়েছিলো। আসলে এই পঞ্চান্নজন মৃত্যুর পরও অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো একটা ভার্চুয়াল জগতের ভেতর। আর যেহেতু এই ভার্চুয়াল জগৎটা আমাদের শহরেরই পুরোপুরি নকল ছিল, সেহেতু তাদের পক্ষে পরিবর্তনটা বোঝার বলতে গেলে কোনো উপায়ই ছিল না।

প্রোগ্রামের ভেতর মানুষের চরিত্রগুলোকে চালানোই ছিল এই লোকগুলোর কাজ। প্রোগ্রামের বাকি হাজার হাজার মানুষ ছিল সেলফ এডাপ্টিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সগুলো ছিল খুব প্রেডিকটেবল, কিন্তু মৃত মানুষের মস্তিষ্কগুলোর আচরণ ছিল বাস্তব মানুষের মতোই আনপ্রেডিকটেবল, ফলে আমাদের প্রোগ্রামে সবরকম ভ্যারিয়েশনই ছিল।

আমার বন্ধু রেমনের বিশেষত্ব ছিল বিভিন্ন গেমের জন্য ইমেজ তৈরী করা, কিন্তু তারপরও ওর জন্য কাজটা কঠিন ছিল – কারণ এই সিমুলেশনটাতে ওর অনেক ডিটেল যোগ করার দরকার ছিল। প্রত্যেক ইন্দ্রিয়ের জন্য একটা করে লেয়ার, প্রতিটা লেয়ারে ভিন্ন রকম ডেটা, আবার সেই ডেটাগুলো আমার ইন্টারফেসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ভীষণ জটিলতা!

আমার কাজটা যে কতটা কঠিন ছিল সেটা না হয় নাই বললাম। শুধু এটুক বলতে পারি, আমার কাজটাই ছিল প্রজেক্টের চুম্বক অংশ, কারণ এরকম ইন্টারফেস পৃথিবীতে আমিই প্রথম সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছিলাম।

জার্মান কোম্পানিটা আমাদের প্রোগ্রামটার জন্য অনেক দাম দিতে প্রস্তুত ছিল, কারণ এরকম একটা  সিম্যুলেশনের ভেতর একজন মানুষের পক্ষে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া সম্ভব বিচিত্র জীবন-যাপন করে – কখনো খেলোয়াড় হয়ে, কখনো প্রেমিক, কিংবা সমুদ্রে পথ হারানো নাবিক। চিন্তা করা যায়, এরকম একটা গেমিং ডিভাইস বিক্রি করে একটা কোম্পানি কত বিলিয়ন ডলার বানাতে পারে!

পনেরো বছরের বেশি লেগেছিলো আমাদের পুরো প্রোগ্রামটা দাঁড় করত। এতগুলো বছর জীবন থেকে কিভাবে চলে গেল, টেরও পেলামনা। অবশ্য আফসোস করিনি, যখন ভেবেছি বাকী জীবনটা কাটাব নানা রকম সিম্যুলেশনের ভেতর বিচিত্র জীবন-যাপন করে।   

কিন্তু আমার ভুলটা হয়েছিল নিজে সিমুলেশনের ভেতর ঢোকা, কোনো ব্যাক-আপ না রেখেই। আসলে প্রথম পরীক্ষামূলক সেশনগুলো শেষ হওয়ার পর আমার আর তর সইছিলো না, আমি নিজে ওই জগতের ভেতরটা দেখতে চাচ্ছিলাম।

এক সোমবার সকালে নিজেই সিমুলেশন জগতের একজন সাবজেক্ট হয়ে গেলাম। আমার এখনো মনে আছে রাইডের দিন যথারীতি একটি বিশেষ চেয়ারে বসিয়ে আমার বিশেষ কয়েকটি নার্ভ সেন্টারে কম্প্যুটার ইন্টারফেসটা যুক্ত করতে শুরু করল সার্জিক্যাল স্পেশালিস্ট রোবট। সূক্ষ্ম কতগুলো তার ঢুকে গেল আমার মাথার বিভিন্ন অংশ দিয়ে। সার্জারীর এ অংশটা শেষ হল বিনা ব্যথায়। আমি দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করতে লাগলাম পরবর্তী অংশটার জন্য।

এক মুহূর্তের জন্য আমি সুইচবোর্ডে লাল একটা আলো জ্বলে উঠতে দেখলাম। আমার মাথার ভেতর মনে হল ছোট-খাটো একটা বিস্ফোরণ হল। এরপরই আমার চোখের সামনে নেমে এলো গাঢ় অন্ধকার। মুহূর্তের জন্য আমি প্রবেশ করলাম আলোহীন, বর্ণহীন, গন্ধহীন, শব্দহীন অসীম শূণ্যতার এক পৃথিবীতে। কিন্তু এরপরই আবার চোখের সামনে জ্বলে উঠল উজ্জ্বল আলো, বদলে গেল দৃশ্যপট।

চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা শহুরে রাস্তা। গাড়ি চলছে, রাস্তায় মানুষ হাটছে – ভোঁ করে একটা ট্যাক্সি চলে গেল আমার প্রায় গা ঘেষে। আমি চারদিকে তাকালাম, মনে মনে প্রশংসা না করে পারলাম না রেমনের। শীত শীত একটা বাতাস আমার গায়ে এসে লাগছিল, আশ্চর্যরকম বাস্তব মনে হচ্ছিল সেটাকে।

আমি রাস্তা ধরে হাটতে শুরু করলাম। মার্কেট আর অফিস প্রেমিসগুলোতে আলো জ্বলছিল নিভছিল। তখন আমার চোখে পড়ল একটা সাইবার ক্যাফে। মজার একটা পরীক্ষা করার লোভ সামলাতে পারলাম না। ওটাতে ঢুকে আমি ইন্টারনেটে লগ ইন করে আমার মেইল সার্ভারে ঢোকার চেষ্টা করলাম। লগ ইন হল। এবার মেইল চেক করার জন্য আমার কোড নাম্বার দিলাম। এবং সেটাও করতে পারলাম। চমৎকার! সময় যত যাচ্ছে, রেমনের এই পৃথিবীটার সৌন্দর্য আমাকে আকৃষ্ট করতে লাগল আরো বেশি করে।

সিমুলেশনের ভেতর ঢোকার পর আমি কি যে অবাক হয়েছিলাম তা বলার মতো না। বাস্তবের অবিকল নকল এই শহর দেখতে দেখতে কেটে গেলো ঘন্টার পর ঘন্টা। আমি আমার ছোটবেলার স্কুলটাও একবার ঘুরে দেখে আসলাম, জনহীন সেই স্কুলের প্রতিটা রুম আমার স্মৃতির সাথে মিলে গেলো। 

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে চমৎকার দিনটার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে মনে পড়ল – বারো ঘন্টারও বেশি সময় চলে গেছে, ওরা এখনো আমাকে তুলে নেয়নি। একটা আতংক ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে লাগল আমার মনে। আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলে গেলাম সেই সাইবার ক্যাফেটাতে, সকালে যেটা দেখেছিলাম। যেহেতু বাস্তব জগতের ইন্টারনেটটাই এখানে সরাসরি যুক্ত করে দেয়া হয়েছে, আমি রেমনের মেইল অ্যাড্রেসে একটা ই-মেইল করে দিয়ে জানতে চাইলাম, কেন সে আমাকে এখনো তুলে নিচ্ছেনা। মেইলটা ছেড়ে দিয়ে খুব অস্থিরভাবে অপেক্ষা করতে লাগলাম উত্তরের জন্য।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তর এলো। এবং উত্তরটা পড়ে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল।

তোমাকে আর কোনদিনই এখান থেকে তুলে নেয়া হবে না।

কম্পিত হাতে আমি আবার মেইল করলাম – রেমন, এটা ঠাট্টার সময় না, আমি আতংকিত।

এবার উত্তর এলো একটা বড় চিঠিতে। ই-মেইল পরে আমি যেটা বুঝতে পারলাম সেটা হলো – সে আসল জগতে মেশিনের একটা ম্যালফাঙ্কশন দেখিয়ে আমাকে এখানে আটকে রাখবে।  আমার শরীরটা থাকবে কোনো ইসিইউতে, আর সে দয়া করলে আমার মস্তিস্কটাকে বাঁচিয়ে রাখবে, তবে শুধুমাত্র এই সিমুলেশনের পৃথিবীর জন্য। পুরো ব্যাপারটাই সে করছে কোম্পানির পুরো স্বত্ব নিজে উপভোগ করার জন্য।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি কোনোকিছু চিন্তা করতে পারছিলাম না। বাসায় ফিরে এলাম প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে। তারপরের কয়েকদিন কাটালাম দিশাহারা অবস্থায়। প্রতি মুহূর্তে আতংকিত থাকি, কখন সে আমার মস্তিস্ককেও শেষ করে দেয় – শরীর তো বোধহয় হারিয়েছিই, মনটাও তখন শেষ হয়ে যাবে, আমি পুরোপুরি অস্তিত্বহীন হয়ে যাবো।

আমার মাথা পুরোপুরি ঠান্ডা হতে আরো দিন কয়েক সময় লাগল। তখন আমি খুঁজতে শুরু করলাম, আমার হাতে কি কি অস্ত্র আছে। আমি এই সিম্যুলেশনটা সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানি, এখন কোনমতে যদি ল্যাবের ঐ সুপার কম্প্যুটারটায় হ্যাক করা যায়, তাহলেই আমি তার মধ্যে বাগ ঢুকিয়ে দিতে পারব। ঐ মুহূর্তে আমার মনে পড়ল, আমি ই-মেইলে এখনো মামুনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি – অর্থাৎ এই ইন্টারনেট সত্যিকার ইন্টারনেটই। তাহলে আমার পক্ষে কথা বলার ছলে ওর মেইলে ভয়ংকর কোন ভাইরাস পাঠানো খুবই সম্ভব।

তবে কাজটা করতে হবে খুব সাবধানে, কারণ ও বুঝতে পারলে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে। আবার এ ধরণের ভাইরাস তৈরিতে আমি খুব একটা দক্ষ নই, ফলে আমার কাজ হয়ে দাঁড়াল ঐ মৃত পঞ্চান্ন জন  স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে এমন একজনকে খুঁজে বের করা – যিনি আমার হয়ে এ কাজটা  করে দিতে পারবেন। তারপরই আপনার নাম শুনলাম এবং যোগাযোগ করলাম আপনার সাথে।

রাকিব এতোক্ষণ ধৈর্য ধরে শুনছিল মনজুর সাহেবের কাহিনী। এবার সে নড়ে-চড়ে বসল।

কি বলছেন আপনি?

হ্যাঁ, সত্য এই যে – আপনিও দৈহিকভাবে মৃত এবং ঐ পঞ্চান্ন জনের একজন, যারা উইল করে মরণোত্তর তাদের মস্তিস্ক দান করেছিল।

এ হতেই পারেনা – রাশেদ উঠে দাঁড়াল।

বসুন, প্লীজ। মাথা ঠান্ডা করুন। ২০১৩ এর  ডিসেম্বরে আপনার একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, মনে আছে? অবশ্যই আছে। আপনি কি ওটাতে বেঁচে গিয়েছিলেন? আপনার অতীত ঘেটেছি আমি, ইন্টারনেটে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের দৈনিক পত্রিকার কাটিং দেখাতে পারি আমি। আপনি তো এরপর থেকেই এখানে।

রাকিবের মনে পড়ল, কয়দিন যাবৎ এই জগৎটাকে খুব বেশি একঘেয়ে মনে হচ্ছিল তার।

বাইরে তখন কৃত্রিম এক সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে।    

(বিজ্ঞান কল্প-গল্প / মায়িন খান, নভেম্বর ২০২০)

One thought on “সিম্যুলেশন

Leave a comment