চলুন সবাই চিনিকে না বলি……. (পর্ব, ৩)

কোন চিনি খাবো, কোন চিনি খাবো না , আর প্রতিদিন কতটুকু পরিমান চিনি খাবো……

চিনি/শর্করা/সুগার – যে নামেই ডাকুন, গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানী আর ডাক্তারদের ক্রমাগত সতর্কবার্তার ফলে এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শত্রু।
উন্নত বিশ্বে সাদা চিনির বদলে লাল চিনি বা Brown Sugar এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যাপারে সচেতনতা এখনও তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি। এর দামও অনেক বেশি।
সাদা চিনি তামাক, এলকোহলের মত আসক্তি সৃষ্টি করে। সাদা চিনি যত খাওয়া হয় তত এটি ব্রেইনকে উদিপ্ত করে আরও বেশি খাবার জন্য । সাদা চিনি খওয়ার ফলে গ্রেলিন, লেপটিন, ডোপামিন, ইত্যাদি হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দ প্রবাহ কিছুটা বাধা প্রাপ্ত হয়, যা ব্রেইনে ক্ষুধার অনুভুতি বাড়িয়ে দে্‌ ফলে আমরা অতিরিক্ত পরিমানে খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পরি যা স্থুলতার সৃষ্টি করে ।
আর আমরা সবাই জানি শারীরিক স্থুলতা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি রোগের কারন। সুন্দর পরিষ্কার রঙের জন্য সাদা চিনি জনপ্রিয় হলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে লাল চিনি উৎকৃষ্ট। মোলাসেস নামক এক প্রকার আঠাল উপাদানের জন্য চিনি লাল বা বাদামি রং ধারণ করে। এ মোলাসেস আখ থেকে চিনি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয়। অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত চিনিতে প্রায় ৩.৫ শতাংশ মোলাসেস থাকে। তাই একে প্রাকৃতিক চিনিও বলা হয়ে থাকে। লাল চিনিকে বেশি পরিশোধিত করে সাদা চিনিতে রূপান্তর করা হয়। যে চিনির রং যত বেশি সাদা, তত বেশি পরিশোধিত, তত কৃত্রিম এবং তত কম পুষ্টিসম্পন্ন। লাল চিনিতে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারির পুষ্টি উপাদান থাকলেও সাদা চিনিতে একেবারেই নাই বললেই চলে! শুধু থাকে শর্করা, যা ওজন খুব দ্রুত বাড়ায়।

সাদা চিনির নামে যে চিনি আমরা খাচ্ছি তা আসলে সোডিয়াম সাইক্লামেট, বোনচারকোল, হাড়ের গুড়ো, ফসফোরিক এসিড, ডি-কালারিং এজেন্ট, রেজিসন ইত্যাদি ব্যবহার করে বানানো হয়, যেগুলো শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

কতটুকু চিনি খাবেনঃ
আমেরিকার হার্ট এসোসিয়েশনের মতে পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষ দৈনিক ৯ চা চামচ ও একজন নারী দৈনিক ৬ চা চামচ চিনি গ্রহণ করতে পারবে। তবে এটা নির্ভর করে শারীরিক পরিশ্রমের উপর। সারাদিন বসে কাজ করে এমন একজন লোকের যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার হয়, একজন রিক্সাচালকের তারচেয়ে অনেক বেশী ক্যালরি দরকার হয়। একজন রিক্সাচালক যদি দৈনিক ১৫/২০ চামচ চিনিও খায় তাহলে সমস্যা হবে না। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম করেনা এমন একজন লোক যদি ১৫/২০ চামচ চিনি খায় তাহলে অল্প কিছুদিন পরেই বিপদ দেখা দিবে। আপনি হয়তো অবাকই হচ্ছেন এই পরিমান চিনি দেখে। ভাবছেন এতো চিনি তো আপনি প্রতিদিন খান না… সুগারের কিন্তু অনেক রকমফের আছে। আমরা ভাতের সাথেও সুগার পাই আবার মিষ্টি খেলে সেখান থেকেও সুগার পাই। আপনি আপনার অজান্তেই অন্যখাবার থেকেও অনেক সুগার পেয়ে থাকেন। তাই আপনার উচিৎ হবে সরাসরি মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে দেয়া বা পুরোপুরি পরিত্যাগ করা।
এটা সত্য যে চিনি আমাদের খুবই প্রিয়। তাই কখনো যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি খেয়েও ফেলি, সেটা জোরে হাঁটা, দৌড়ানো, শারীরিক পরিশ্রম সহ নানা ভাবে বার্ণ করে ফেলতে হবে। সেজন্য সকালে বা বিকালে বা সন্ধ্যায় ২০ মিনিট করে হাঁটা যেতে পারে। এতে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ণ হয়ে যাবে। তবে শেষে একটি কথার পুনরাবৃত্তি না করলেই নয়। পরিশোধিত সাদা চিনির চেয়ে লালচে চিনির ক্ষতি কম, কিন্তু সবচেয়ে ভাল খুব কম চিনি গ্রহণ করা এবং ধীরে ধীরে খাদ্যতালিকা থেকে এটি বাদ দেয়া।

……চলবে


……তিনা শুভ্র

https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style medicine)

One thought on “চলুন সবাই চিনিকে না বলি……. (পর্ব, ৩)

Leave a reply to Mayeen Khan Cancel reply