উন্নতি চিন্তা – বুয়া

খুব সহজ ভাবেই লিখছি, কোন রকম লুকোচুরি ছাড়া। পশ্চিমা সভ্যতার মত উন্নত হবার স্বপ্ন যে আমরা কম বেশি সবাই দেখি এটা সত্য। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে গিয়ে আমাদের ফলাফল প্রায়ই উল্টে যায়। পশ্চিমা সভ্যতার ভালো দিকগুলোর যা যা আমাদের মধ্যে এখনো নেই, সেগুলো যদি এক এক করে আমরা আত্মস্থ করতে পারি তাহলে হয়ত আমরা একসময়য় আমাদের ভালো দিক গুলোসহ এক উন্নত বিশ্বে পরিণত হতে পারবো।

আমাদের দেশে নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে ওপর দিকের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রায় প্রতিটি বাসায় “বুয়া” হিসাবে কেউ না কেউ নিযুক্ত থাকেই। ভদ্র ভাষায় এটাকে নিয়োগ বলা হলেও সমাজে সাধারণ যে দৃষ্টিভঙ্গি এ ব্যাপারে কাজ করে তা হল – “নিচু শ্রেনির/ গরিব কিছু মানুষ আমাদের ঘর সংসারের কাজে সাহায্য করে আর তাদের আমরা মাসে মাসে কিছু টাকাও দেই”। রেসিজমের আলোচনায় না গেলেও একথা বলতেই হবে, এটা বিষয়টাকে বর্ণনা করার জন্য খুবই জঘন্য একটা পথ।

যাহোক, একটু পশ্চিমে উঁকি দিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন, নিজের সংসারে অন্যের সাহায্য নেয়াটা সেখানে কতটা স্থুল যোগ্যতার চিহ্ন। যতই কষ্ট হোক, উন্নত বিশ্বে যার যার কাজ তাকেই করতে হয়; আর যদি কোন উপযুক্ত কারণে অন্যের সাহায্য নিতেই হয় তাহলে তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে, যা কেউই চান না। জাতি হিসাবে আমরা কি এতোই অধঃপাতে গেছি, যে নিজের কাজ অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে না পারা আমাদের প্রায় জাতিগত বৈশিষ্টে পরিণত হয়েছে !

আমার খাবার আমিই রাঁধবো, আমার কাপড় আমিই পরিষ্কার করব, আমার এঁটো থালা বাটি আমিই সাফ করব – এটাই তো স্বাভাবিক এবং জরুরী। আর যদি তা নাই পারি, তাহলে সরকার/কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে “আমি অচল” সার্টিফিকেট নিতে হবে যেন অন্যের সাহায্য নিতে পারি। পরিষ্কার করে মাথায় রাখতে হবে, বিনা কারণে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করানো পঙ্গুত্বের চিহ্ন – হোক তা শারীরিক বা মানসিক।

সেদিন খুব দূরে হয়ত নেই যখন “বুয়া” পেশার মানুষগুলো অন্তত বেতনের সমঅধিকারের দাবি করবে; হয়তো তা এর মধ্যে শুরু হয়েও গেছে। তাই দামি চশমা, দামি গাড়ি আর হাল ফ্যাশানের শপিং মলে গিয়ে নিজেকে উঁচু মানের না ভেবে নিজের এঁটো থালা কিম্বা দুর্গন্ধ জামা কাপড় নিজে পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে নুন্যতম যোগ্যতার মানুষ হতে হবে। তাহলেই হয়ত কোন একদিন সত্যিকারে উঁচু মানুষ হবার সম্ভাবনা টিকে থাকবে।

পরে বড় বললে যে মানুষ বড় হয় এটা সবসময় ঠিক না। বরং বুকে হাত দিয়ে যেদিন নিজেকে নিজের কাছে যোগ্য হিসাবে বিনয়ের সাথে স্বীকার করে নিতে পারবো, সেদিনই নিশ্চিত যোগ্যতার পরিচয় মিলবে, তার আগে নয়!

One thought on “উন্নতি চিন্তা – বুয়া

Leave a reply to সৈয়দ কল্লোল Cancel reply