………………….
হাইপোথাইরয়েডিজম বর্তমানে অতি দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাওয়া একটি রোগ। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬ গুণ বেশি। কিন্তু দেখা যায় এখনও আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মেয়েরই এ রোগ সম্পর্কে ধারণা কম। বেশির ভাগেরই ধারণা, এই রোগে ওজন কখনই কমে না বা বাকি জীবন কুমড়া পটাশ হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। কথাটি একেবারেই সত্য নয়। আসুন আমরা হাইপোথাইরয়েডিজম সম্পর্কে জেনে নেই…।।
‘হাইপো’ শব্দের অর্থ কম। যখন কোন কারণে মানুষের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প পরিমানে হরমোন তৈরি হয়, তখন তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। থাইরয়েড দেখতে একটি প্রজাপতির মত গ্ল্যান্ড, যা আমাদের গলায় থাকে। এই গ্ল্যান্ড থেকে থাইরক্সিন নামক হরমোন নিসৃত হয়। থাইরক্সিন হরমোন আমাদের দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি হার্টের গতি নিয়ন্ত্রণে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে, শরীরে কতটুকু প্রোটিন উৎপাদন হবে ইত্যাদি গুরুপুর্ণ কাজে, থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব রয়েছে। মেটাবোলিজম হোল, খাদ্য হজমের পরের ধাপগুলো। যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজমে, থাইরয়েড হরমোন কম থাকে, তাই শরীরে মেটাবোলিজমও কম হয়। মেটাবোলিজম কম হওয়ার কারনে, হাইপোথাইরয়েডিজমের ব্যক্তিদের ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকে। এই জাতীয় ব্যক্তির বিএমআই স্বাভাবিক পরিসরের চেয়ে বেশি। হার্ট রেট এবং নাড়ির হার ধীর এবং রক্তচাপও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। ব্যক্তিও কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করে।
আর তাই ওজন কমানটা পুরটাই নির্ভর করে এই মেটাবোলিজমের উপর। যার মেটাবোলিজম যত বেশি বা দ্রুত হবে, তার ওজন তত দ্রুত কমবে। সেজন্য এই রোগীদের মেটাবোলিজম কিভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকেই মুলত খেয়াল দিতে হবে। তাই এদের করনীয় হোল,
১। নিয়মিত ওষুধ সেবন করুনঃ
প্রতিদিন একই সময়ে ডাক্তারের কথামতো ওষুধ খান। আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে বলে তবেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন। এমনকি যদি আপনি ভাল বোধ করেন, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আপনার নিয়মিত ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের সারা জীবন ধরে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
২। মেটাবলিজম-বুস্টিং ব্যায়াম করুনঃ
প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে জোরে জোরে, ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। এই হাঁটা বা ব্যায়াম আপনার মেটাবোলিজম বহুগুনে বাড়িয়ে দিবে।
৩। যথেষ্ট পরিমানে পানি পান করুনঃ
দিনে ৩/৪ লিটার পানি পান করুন। পানি হোল আপনার মেটাবোলিজমের প্রধান জ্বালানী।
৪। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল বা ফাইবার সাপ্লিমেন্ট খানঃ
আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রিত মেটাবোলিজমের জন্য ফাইবারের প্রয়োজন আত্যাধিক, কারণ এটি শরীরের অতিরিক্ত লবন এবং পানি বের করতে সহায়তা করে। হাইপোথাইরয়েডিজমের ফলে যে বাড়তি ওজন বৃদ্ধি ঘটে, তার প্রধান কারণই হোল শরীরে অতিরিক্ত লবন ও পানি জমা। আর এই লবন ও পানি বের করতে শাকসবজি বা ফাইবার খাওয়া আত্যন্ত জরুরী। আপনি চাইলে ফাইবার সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন। প্রতিদিন ৩৫/৪০ মিলি গ্রাম করে এই সাপ্লিমেন্ট পাউডারটি খেতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফাইবার সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যেমন, ইসবগুলের ভুসি, Metamucil Fibre supplement, ইত্যাদি।
৫। আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোনও ভাবেই অতিরিক্ত চিনি খাবেন না। কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাইপোথাইরয়েডের রোগীদের পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
আবার যদি আপনার ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তাহলেও আপনার
হাইপোথাইরয়েড হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
আর এজন্য উচিৎ হবে চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা কিংবা পরিমানে একেবারে কমিয়ে দেয়া।
৬। প্রতিদিন টক জাতীয় দেশী ফল ও বিভিন্ন রঙের ফল খানঃ
কারন এগুলোতে আছে এন্টিঅক্সডেন্ট ও নানা রকম ভিটামিন যা, থাইরয়েড গ্লান্ডকে সঠিক ভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
৭। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড রাখুনঃ
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। তাই মাছ খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিন, কারন এটি থাইরয়েডের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড সাপ্লিমেন্ট খান। বাজারে বিভিন্ন নামে এই ফিশ অয়েল পাওয়া যায়।
৮। প্রতিদিনের খাবারে আয়রন ও আয়োডিনের পরিমাণ কম থাকলেও থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৯। যেকোনো মানসিক চাপ থাকলে বা রাতে ঘুমের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারন, মানসিক রোগ বা অনিদ্রা থাইরয়েডের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
১০। চাইলে বিশেসজ্ঞের পরামর্শমতো, যোগ ব্যয়াম বা ইয়োগা ও মেডিটেশন করতে পারেন। ধারনা করা হয়, এগুলো থাইরয়েড গ্লান্ডের রক্ত প্রবাহকে সঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……………………
…………তিনা শুভ্র
https://teenasuvrosworld.wordpress.com
(Weight Reduction and Life-Style Medicine)

Good one!
LikeLike