আমি

আমার জীবনে আমি নেই কেন? আজ একটা নতুন জিনিস বোঝা গেলো যা আগে কখনো এভাবে বোঝা যায়নি। সেটা হল আমার কাছে আমার কোন অবস্থান নেই। অর্থাৎ, আমি যা কিছুই আমার জীবনে ঘটাই তার সবটাই আমি-হীন কোন কিছুকে কেন্দ্র করে। আমার জীবনের কোন অংশই যেন আমাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেনি। আমি কেউ না! আমার কোন অস্তিত্ব আমার মনোজগতে নেই।

গভির ভাবে চিন্তা করলে মনে হয়, আমি নিজের দিকে তাকাতে পছন্দ করি না। এটা বাস্তবে আয়নায় তাকানো না। এটা মনের মধ্যে নিজের দিকে তাকানো। কি যেন একটা ভয়; যেন তাকালে আমি এমন কিছু দেখবো যা আমার ভালো লাগবে না; কিম্বা যা আমি মোটেও চাইনা এমন কিছু চোখে পড়বে। প্রশ্ন হল, আমি কি আমাকে ঘৃণা করি? যদি তাই হয়, তাহলে এটা ঘৃণার চেয়েও অনেক তীব্র, অনেকটা অস্বীকার করার মতো, ঠিক যেমন বীভৎস কোন দুর্ঘটনা আমাদের মন ভুলে থাকে।

আমি তো এতটা বীভৎস বা মন্দ নই যে নিজেকে নিজের কাছে আড়াল করে রাখতে হবে! এটা বন্ধ হওয়া দরকার। আমার জন্ম হওয়া প্রয়োজন, প্রকাশ্যে! হতে পারে, বাস্তব জীবনে একজন সত্যিকারের ভালো শিক্ষানবীশ হতে গেলে নিজেকে মুছে ফেলতে হয়, যেন শিক্ষা দিয়েই নিজের নবজন্ম হয়। কিন্তু মুশকিল হল, যে শিক্ষা আমাকে পুনর্বার জন্ম দিবে তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য ? আর যাই হোক, সাধারনত শতভাগ নয়। ভুল শিক্ষা আসবেই; আর তা শুধরে নিতে প্রয়োজন জন্মসুত্রে পাওয়া নিজেকে।

তাই, ভালো শিক্ষানবিশ হতে নিজ সত্ত্বাকে বিসর্জন দেয়া খুব ভুল। একজন মানুষের অর্ধেক যোগ্যতা আসে জন্মে, বাকি অর্ধেক চর্চায়। শিক্ষা লাভে বিনয় ভালো, প্রয়োজনীয়ও। কিন্তু অতি বিনয় সর্বনাশা। কোন কিছুই বৃথা নয়। সবচেয়ে কুৎসিত চেহারা কিম্বা স্বভাবের মানুষটাও নয়। আর কুৎসিত, সেটা কার জন্য? অবশ্যই অন্যদের। আমার জন্য যে বড় কুৎসিত আমিটাও সুন্দর!

বড় ভুল করে ফেলেছি, নিজের জন্য তেমন কোন নিঃশর্ত শ্রদ্ধা কিম্বা ভালবাসা রাখিনি। তাইতো ভিক্ষুকের মতো ঘুরে ফিরেছি দু’য়ারে দু’য়ারে ভালবাসা, শ্রদ্ধা কিম্বা স্বীকৃতির খোঁজে। একবারের জন্যও মনে হয়নি, আমার জন্মই আমার নিজের প্রতি সবচেয়ে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি, ভালবাসা আর শ্রদ্ধা। কোন অর্জনের বিনিময়েই একে খোয়ানো চলে না।

2 thoughts on “আমি

  1. নিজেকে দেখার জন্য একটা ভালো আয়না হচ্ছে অন্য মানুষ। যদিও সেই আয়নায় স্পষ্ট ছবি আসে না, কিন্তু অন্তত একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। যত বেশি মানুষের সাথে মেশা যাবে, তত বেশি স্পষ্ট হবে নিজের ছবিটা নিজের কাছে। আমার মনে হয়, যাদের নিজেকে নিয়ে এই সমস্যা আছে তাদের কখনোই নিঃসঙ্গ থাকা উচিত না।

    Liked by 1 person

Leave a comment