যারা একেবারেই শাক-সবজী খান না বা পরিমানে কম খান, তারা চাইলে ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন…

……………………..

মোটামুটিভাবে, যেকোনো রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে গেলেই, ডাক্তার বেশি বেশি শা্ক-সবজী ও ফলমূল খেতে বলেন। এর একটি বিরাট কারন হোল, এগুলোতে থাকে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ। এই খাদ্য আঁশ বা ফাইবারের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আর এই খাদ্য আঁশ পাওয়া যায় শুধুমাত্র উদ্ভিদ থেকে। কোন প্রাণীজ উৎস থেকে এই আঁশ পাওয়া যায় না। যেমন, শাক সবজী, ফলমূল, বিভিন্ন রকমের ডাল ও বীচি, বাদাম, সিম ও মটর ইত্যাদি। আবার আমাদের শরীর এসব আঁশ হজম করতে পারে না। ফলে তা মলের সাথে বেরিয়ে যায়। কারন, এদের হজম করার মতো এনজাইম আমাদের শরীরে থাকে না। মলের সাথে বেরিয়ে যাবার সময়, সাথে করে মলও নিয়ে বের হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আরাম হয়।

আমাদের খাদ্যনালীতে রয়েছে বেশ কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এরা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। মজার ব্যাপার হোল, এই খাদ্য আঁশ বা ফাইবার হোল, এই ব্যাকটেরিয়াদের খাবার। আমাদের শরীর যেহেতু এই আঁশ হজম করতে পরে না, অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া গুলো এদের খাদ্য হিসেবে খায় এবং বেঁচে থাকে। এবং বিনিময়ে ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের বেশ কিছু উপকার করে থাকে, যেমন, খাদ্যনালীর পথ পরিষ্কার করে, হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তের বাজে চর্বি বা বাজে কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দেয়, রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, ফ্যাটি এসিড তৈরির মাধ্যমে শরীরের ফ্যাট কমায়, এক কথায়, পুরো শরীরের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ দান করে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো।
তাই, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো যেন সঠিকভাবে তাদের কাজ করতে পারে, এজন্য ডাক্তাররা আমাদের প্রচুর পরিমানে শাক সবজী ও ফলমূল খেতে বলেন। দেখা গেছে, যাদের দেহে এই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বেশি, পেটে মেদ জমার হার, তাদের তত কম।

দেখা যায় যে, আমরা অনেকেই শাক সবজী খেতে পছন্দ করিনা বা খাওয়া হয়ে উঠে না। আর তখনই দেখা দেয় নানান সমস্যা। কারন, ব্যাকটেরিয়াগুলো পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে, তারা তাদের কাজগুলো ঠিক মতো করতে পারেনা। আর হঠাৎ করেও শাক সবজী খেতে কাররই ভালো লাগে না। এমতাবস্থায় আপনি চাইলে সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক হিসেবে প্যাকেটের ফাইবার খেতে পারেন। প্যাকেটের ফাইবার গুলোর মধ্যে ইসবগুলের ভুষি খুবই পরিচিত একটি নাম।

বর্তমানে, আমেরিকাতে দেখা যায়, তারা শাক সবজী কম খেয়ে, মাংসের উপর বেশি ঝুঁকে পরছে, আর খাবারে আঁশ বা ফাইবারের পরিমান খুবই কম হয়ে যাচ্ছে এবং সেদেশে বেড়ে চলছে রোগের প্রকোপ।

তবে চেষ্টা করুন, প্রতিদিন খাবার থেকেই আঁশ বা ফাইবার গ্রহন করতে। আর যদি মনে করেন যে, আঁশ গ্রহন আপনি কম করছেন, সেক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি হতে পারে আপনার প্রথম বন্ধু। আর ভুষি খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী, যদি না আপনার কোন সমস্যা থেকে থাকে।

চলুন দেখে নেই ইসবগুলের ভুষি কি করে আমাদের দেহে…

১। এই ভুষি, অামাদের খাদ্য হজমের হার বহুগুন বাড়িয়ে দেয়, ফলে চর্বি জাতীয় খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। বেশি সময় নিয়ে চর্বি হজম না হওয়ায়, রক্তে চর্বি বেশি বাড়তে পারে না। তবে এই সুবিধা পেতে হলে, আপনাকে তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ভুষি খেতে হবে, যেন ভুষি তার কাজ শুরু করে দিতে পারে।

২। খাদ্য নালীতে গিয়ে এই ভুষি, চর্বিকণাকে বেঁধে ফেলে এবং মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। মানে হল, ভুষি খাদ্যনালী থেকে, আমাদের খাবারের কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়, এর ফলে রক্তে কোলেস্টেরলসহ চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। ভুষি খাদ্যনালী থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীর রোগ বা অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

৩। ব্যাকটেরিয়াগুলো যখন, এই ভুষি খায়, তখন তারা সর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড তৈরি করে, যা শরীরে ফ্যাট ভাঙ্গার হার বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে ফ্যাট জমার হার কমিয়ে দেয়। এতে পেট সহ পুরা দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে।

৪। ইসবগুলের ভূষিতে রয়েছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান, যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভুষি সাহায্য করে থাকে।

আমাদের খাদ্যনালীর এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই, আমাদের নিয়মিত শাক সবজী, ফলমূল, বিভিন্ন রকমের ডাল, বাদাম ও বীচি ইত্যাদি আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া বাড়ানো উচিত।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

……তিনা শুভ্র ।

Leave a comment