আমাদের একটু গলা ব্যাথা হলেই, আমরা বলি টনসিল হয়েছে। অথচ এই টনসিল কি এবং এর কাজ কি, তা জানলে আপনার টনসিলের উপর কোন রাগই থাকবে না, বরং ভালবাসা জন্মাবে।
টনসিল হচ্ছে একধরণের অঙ্গ বা গ্রন্থি, যা আমাদের গলার পিছনের দিকের অংশে থাকে। টনসিল আমাদের দেহে white blood cell ও এন্টিবডি উৎপন্ন করে থাকে। এই white blood cell ও এন্টিবডি বাহির থেকে দেহে প্রবেশকারী, রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু কখনো কখনো এইসব জীবাণুকে ধ্বংস করতে গিয়ে, টনসিল নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে ইনফেকশন হয় এবং এই টনসিল ফুলে যায়। একেই আমরা মেডিকেলের ভাষায় টন্সিলাইটিস বলি এবং সাধারণের ভাষায় টনসিলের সমস্যা বলে চিনি।
টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে টনসিলের এই সমস্যা নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যায় । তবে যদি নিজ থেকে ঠিক না হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। ৩-৪ দিনের বেশি সময় ধরে গলা ব্যাথা থাকলে, জ্বর আসলে এবং গিলতে ব্যাথা করলে, সমস্যা মারাত্মক হয়ে যাওয়ার আগেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে থাকলে টন্সিলাইটিস ভালো হয়ে যায়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহন না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে এবং সেই সাথে টনসিলে দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন হয়ে থাকে, আর এই এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি এক বছরে ছয়/সাত বা কিংবা চার/পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেয়াই ভালো।
লক্ষণ দেখে কীভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন:
. গলাব্যথা এবং সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
. জ্বর ১০২ ডিগ্রি-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সঙ্গে মাথাব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।
. গলার সঙ্গে কানের সম্পর্ক রয়েছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকতে পরে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
. শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
. অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে।
আপনার টনসিলের সমস্যার পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন, সেটা পরীক্ষার পরই চিকিৎসক বলতে পারবেন যে, আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হওয়া দরকার।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে কি কি সমস্যা হতে পারেঃ
. টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে।
. টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে, শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
. ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
. বাতজ্বর হতে পারে।
. রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
. যদি টনসিল বড় হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন থাকে, তাহলে ক্যান্সার সহ নানান জটিলতার সম্ভাবনা থাকে।
টনসিলের সমস্যায় নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারেঃ
. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
. টনসিল ইনফেকশন হলে, তরল ও উঞ্চ আহার গ্রহণ করতে হবে৷
. খাবার খাওয়ার পর প্রতিবার দাঁতসহ মুখগহ্বর ব্রাশ দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
. তীব্র গরম এবং তীব্র শীত দুটোই এড়িয়ে চলতে হবে৷
. আইসক্রিম, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানীয়, রোদ বা গরম থেকে এসেই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে৷
. ইনফেকশন চলাকালীন সময়ে বিশ্রামে থাকতে হবে৷
. গলায় ও কানে ঠাণ্ডা লাগা থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রয়োজনে গলা ও কান কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে৷
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
……তিনা শুভ্র ।
