…………………..
দাঁদ, ফাঙ্গাস জনিত ত্বকের একটি রোগ। ডার্মাটোফাইট নামক
ফাঙ্গাসের সংক্রমণে দাঁদ হয়ে থাকে। এটা দাউদ বা রিং ওয়ার্ম
(Ring warm) বা টিনিয়া (Tinea) নামেও পরিচিত।
এটি একটি সংক্রামক রোগ। অতিসহজেই এটি রোগী থেকে সুস্থ দেহে বিস্তার লাভ করতে পারে। আক্রান্ত রোগির কাপড় চোপড়, চিরুনি, তোয়ালে, বিছানা ইত্যাদি ব্যবহার করলে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকে।
দাঁদ সাধারণত অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শরীর, ঘামে ভেজা শরীর বা দীর্ঘ সময় ভেজা থাকে এমন শরীর, ত্বকে ক্ষত আছে এমন শরীরে বেশি হয়ে থাকে। সাধারনত ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা এবং ভালোভাবে আলোবাতাস পায় না, এধরনের জায়গায় এই ফাঙ্গাসের জন্ম হয়।
আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট, লাল গোটা দেখা যায় এবং সামান্য চুলকায়। আস্তে আস্তে আক্রান্ত স্থানে বাদামী বর্ণের ফুসকুড়ি দেখা যায় এবং স্থানটি বৃত্তাকার (গোলাকার চাকার ন্যায়) ধারন করে, যার কিনারাগুলো সামান্য উঁচু হয়। দিনদিন চাকার আকৃতি ও চুলকানি বাড়তে থাকে। চুলকানোর পর আক্রান্ত স্থানে আঠালো রস বের হয়। ক্ষতস্থান থেকে খুঁশকির মত চামড়া উঠতে থাকে। কখনো কখনো পানি বা পুঁজ ভর্তি ফুসকুড়ি দেখা যায়।
দাঁদ শরীরের যেকোন অঙ্গের চামড়ায় হতে পারে। যেমন, মাথার ত্বকে বা চুলের নিচে, দাড়িতে, কুচকিতে ও রানের দু পাশে, পিঠ, পেট, হাতে ও পায়ের পাতায়, গায়ে ইত্যাদি জায়গায় দাঁদ হতে পারে।
দাঁদ অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এর চিকিৎসা শুরু না করলে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সংক্রমিত হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে যেন, এটি আর না ছড়াতে পারে। সাধারণত এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম, মলম, ওয়েন্টমেন্ট, শ্যাম্পু, স্প্রে লাগালে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কিন্তু যদি সংক্রমণ দেহের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে, তখন এন্টি ফাঙ্গাল ওষুধ মুখে খেতে হয়। এজন্য অতিদ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশে দাঁদ এর প্রাদুর্ভাব থাকলেও আমাদের দেশের মতো গরম ও ঘর্মপ্রবণ দেশে বেশি দেখা দেয়। সব বয়সের মানুষই এতে আক্রান্ত হতে পারে এবং একবার আক্রান্ত হলে বাড়বার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন, এ রোগের চিকিৎসা খুবই সহজ এবং দ্রুত আরোগ্য সম্ভব, তবে দেরি করলে অনেক সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাজেই যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা নিন।
চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি ছাড়াও নিজের জীবনধারার পরিবর্তন করেও দাঁদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য সম্মত ওজন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি বজায় রাখলে, দেহে দাঁদ এর সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
…….. তিনা শুভ্র ।।
