আপনি কি কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানার সমস্যায় ভুগছেন ? ডাক্তারের কথামতো শাক সবজি, ফলমূল আর পানি পান করেও, কষা পায়খানার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না? জেনে নিন, এ ক্ষেত্রে কি করলে আরাম পেতে পারেন।

…………. আপনি অনেকদিন ধরেই কষা পায়খানার সমস্যায় ভুগছেন। ডাক্তারও দেখিয়েছেন অনেক, কিন্তু কোন আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। ডাক্তারের কাছে গেলেই, ডাক্তার, আপনাকে শুধু শাক সবজি, ফলমূল আর পানি পান করতে বলেন। কিন্তু শাক সবজি খেয়েও আপনার কষা কমছে না….।

আসলে ডাক্তার, আপনাকে যা যা করতে বলেছেন, তার সবকিছুই সঠিক ছিল, শুধুমাত্র আপনার সচেতনতা একটু বাড়লেই, আপনি কিন্তু আরাম পেতে পারেন সহজেই। চলুন জেনে নেই কিভাবে….

আপনি খাবার খান, মুখ দিয়ে আর সেটার অদরকারি অংশগুলো মল আকারে বের হয়ে যায়, পায়খানার রাস্তা দিয়ে। একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, আপনার মুখ থেকে শুরু করে, পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত একটা লম্বা নল বা রাস্তা আছে। আপনার উচিত হবে, মল যেন সেই রাস্তা দিয়ে, অনায়াসেই পার হয়ে, পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা সুন্দর ও আরামদায়ক করা। যদি কোন কারনে, ওই রাস্তা দিয়ে, মল ঠিকমতো কিংবা সময়মতো, না বের হতে পারে, তখনই কষা পায়খানার সৃষ্টি হয়। আসুন দেখে নেই, কিভাবে সেই রাস্তায়, মলের গতি বাড়ানো যায়।

১, প্রথমেই, প্রচুর পানি পান করতে হবে। দিনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান পানি, আপনার খাদ্যনালী থেকে, মল বের করে দিতে সাহায্য করে। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুই/আড়াই গ্লাস পানি, খালিপেটে পান করতে পারেন। এবং এর আধ ঘণ্টা পর সকালের নাস্তা খেতে পারেন। সকালে খালি পেতে পানি পান, আপনার ঘুমিয়ে থাকা খাদ্যনালীকে সচল করবে, ফলে মল বের হতে সহজতর হবে।

২, সারাদিন প্রচুর চলাফেরা, হাঁটাহাঁটি, কাজকাম করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৯/১০ হাজার কদম হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন। আপনি যত বেশি চলাফেরা করবেন, আপনার খাদ্যনালীর গতি তত বাড়তে থাকবে। আর খাদ্যনালীর গতি বাড়ানো মানেই হলো, খাদ্য দ্রুত হজম হয়ে, মল হিসেবে বের হয়ে যাওয়া।

৩, প্রতিদিন রাতে, ৬/৭/৮ ঘন্টা, একটানা ঘুমাতে হবে। রাতের একটানা ঘুম না হলে, কনস্টিপেশন বা কষা পায়খানার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে খুব সহজেই ।

৪ , যদি কারো কোন মানসিক সমস্যা থেকে থাকে, অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কারণ, যেকোনো মানসিক সমস্যাতেই কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায় বহুগুণ।

৫, প্রাণী উৎস, থেকে আসা সকল খাবারের পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। আর বাড়িয়ে দিন উদ্ভিদ উৎস, থেকে আসা সকল খাবার। কেননা, আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো কিংবা মল নরম করার জন্য দরকার প্রচুর খাদ্য আঁশ বা ফাইবার। আর কেবলমাত্র উদ্ভিদ উৎস, থেকে আসা খাবারে, এই খাদ্য আঁশ বা ফাইবাত্র থাকে প্রচুর পরিমাণে, যা প্রাণী উৎস থেকে আসা খাবারে, একেবারেই থাকে না। যেহেতু আমাদের খাদ্যনালী, এই ফাইবারগুলো হজম করতে পারে না, সেহেতু এই ফাইবার বা আঁশগুলো, শরীর থেকে পায়খানার রাস্তা দিয়ে, বের হয়ে যায়। আর বের হবার সময়, এরা নিজেদের সাথে কিছু মল নিয়ে বের হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরাম পাওয়া যায় ।

আপনি চাইলে, ফাইবার হিসেবে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সকাল ১১/১২টা এবং রাত ৭/৮টার দিকে, ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি, ১ গ্লাস পানিতে গুলিয়ে, সাথে সাথে খেয়ে নিবেন। পরবর্তীতে প্রচুর পানি পান করুন। চেষ্টা করুন, দুপুরে এবং রাতের খাবার খাওয়ার আধাঘণ্টা/এক ঘণ্টা আগে ভুসি খেতে । এতে আপনার পায়খানা নরম হতে অনেক সহজ হবে। তবে, এই ভুসির সাথে সাথে, শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়াও বাড়িয়ে দিতে হবে অনেকগুণ।

তবে, কষা পায়খানার সমস্যা যদি কারো তীব্র হয়, কষার সাথে আরও অন্য সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামূলক।

এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিত্‍সা নয়, শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।

যেকোনো রোগ বা সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

…. ……তিনা শুভ্র ।। ….

2 thoughts on “আপনি কি কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানার সমস্যায় ভুগছেন ? ডাক্তারের কথামতো শাক সবজি, ফলমূল আর পানি পান করেও, কষা পায়খানার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না? জেনে নিন, এ ক্ষেত্রে কি করলে আরাম পেতে পারেন।

  1. তিন লিটার পানি খেলে পেটে ভাত খাবার জায়গা থাকে না, এইটা একটা সমস্যা।

    Like

    1. একবারে ৩ লিটার নয়। সারাদিন ধরে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।

      তাছাড়া, খাওয়ার আগে, ১ গ্লাস পানি পান করলে, আপনি ভাত কম খেতে পারবেন। এটাতো একটা ভালো অভ্যাস।

      এতে ওজনও বাড়বে না, আর শরীরও সুস্থ থাকবে।

      Liked by 1 person

Leave a comment